পরিবার মুখ ফিরিয়েছে, এইচআইভি আক্রান্তের পাশে দাঁড়াল হাসপাতাল

অনাথ ওই কিশোরের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁরা জানাচ্ছেন, হাত ধরলে, কথা বললে যে এ রোগ ছড়ায় না এটাই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৮ ০৩:৪৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

এক সময় ‘এইচআইভি- আক্রান্ত’দের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া নিয়ে ‘বদনাম’ ছিল এ হাসপাতালের। গত ছ’মাস ধরে সেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, কর্মীরাই আগলে রেখেছেন ‘এইচআইভি পজিটিভ’ এক কিশোরকে। অনাথ ওই কিশোরের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁরা জানাচ্ছেন, হাত ধরলে, কথা বললে যে এ রোগ ছড়ায় না এটাই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

Advertisement

হাসপাতালের নথি বলছে, এক সময় শিলিগুড়িতে বাবা-মার সঙ্গে থাকত ওই কিশোর। বাবা ডুয়ার্স-দার্জিলিঙের রাস্তায় গাড়ি চালাতেন। ২০০৯ সালে দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে কালনায় বাপেরবাড়িতে চলে আসেন মা। ২০১৩ সালে মারা যান তিনিও। ছেলেটি কিছুদিন পরে চর্মরোগে আক্রান্ত হয়। কালনা হাসপাতালে তাকে ভর্তি করান মামাবাড়ির লোকেরা। প্রথম প্রথম খোঁজখবর নিলেও পরে তাঁদের দেখা যায়নি।

হাসপাতালের তরফে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পুলিশ জানায়, কালনা শহরের বাড়ি ছেড়ে গিয়েছে ওই ছেলেটির পরিজনেরা। কালনার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ বিষয়টি জেনে ছেলেটির পাশে দাঁড়ান। কয়েকমাস পরে ফের অসুস্থ হয় ওই কিশোর। ধরা পড়ে, ‘এইচআইভি’ রয়েছে তার শরীরে। বর্ধমান মেডিক্যালে ‘রেফার’ হয়ে আসে সে। তারপর থেকে এটাই তার ঠিকানা।

Advertisement

আরও পড়ুন: চিকিৎসার গাফিলতি, ২২ বছর পরে মিলল ক্ষতিপূরণ

ডাক্তারেরা জানান, ‘কেস হিস্ট্রি’ দেখে বাবা-মা-ও ‘এইচআইভি পজিটিভ’ ছিলেন জানার পরে, ‘অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি’তে ওই কিশোরের চিকিৎসা শুরু হয়। ধীরে ধীরে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠে সে। এখন বছর চোদ্দোর সেই ছেলেটি হাসপাতালের শয্যা ছেড়ে আয়াদের সঙ্গে ঘুরতে যায়। কখনও তাকে সুপারের অফিসে ঢুকে গল্প করতে দেখা যায়। কিশোর জানাল, আকাশ দেখতে খুব ভাল লাগে তার। বলল, ‘‘মামা-মাসিরা কেউ আসে না। এখানে ভালই আছি। আয়ামাসি, দিদিমণিরা (নার্স) জামাকাপড় দেয়। সবাই খুব ভালবাসে।’’ হাসপাতালের নার্স কৃষ্ণা রায়, স্নিগ্ধা মুখোপাধ্যায়েরা বলেন, “সবাই মিলে ওকে ভাল রাখার চেষ্টা করি।’’ আয়া রুম্পা মাজি, আরতি পান্ডেরাজানান, এখনও ‘এইচআইভি’ শব্দটি শুনলে দূরে সরে যান অনেকে। কিন্তু এই রোগ কাউকে ছুঁলে, মিশলে, কথা বললে হয় না, সেটা তাঁরা জানেন। তাঁদের কথায়, “ও আমাদের বাড়ির ছেলের মতো। ওকে সুস্থ করতে প্রয়োজনীয় যত্ন-আন্তরিকতা দেওয়ার চেষ্টা করি।’’

হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা বলেন, “ছেলেটাকে এ ভাবে কত দিন আগলাব? প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে ওকে সরকারি হোমে রাখার আবেদন করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement