হিন্দুস্তান কেব্‌লসে ঝাঁপ ফেলারই সিদ্ধান্ত

প্রায় দেড় দশক উৎপাদনশূন্য হয়ে পড়ে থাকার পরে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে হিন্দুস্তান কেবল্‌স কারখানা। আসানসোলের রূপনারায়ণপুরের এই কারখানাটিতে ঝাঁপ ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারী শিল্প মন্ত্রক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও আসানসোল শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১৭
Share:

রূপনারায়ণপুরের কারখানা। ছবি: শৈলেন সরকার।

প্রায় দেড় দশক উৎপাদনশূন্য হয়ে পড়ে থাকার পরে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে হিন্দুস্তান কেবল্‌স কারখানা। আসানসোলের রূপনারায়ণপুরের এই কারখানাটিতে ঝাঁপ ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারী শিল্প মন্ত্রক। বুধবার ওই দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘‘খুবই দুঃখের বিষয়। অনেক চেষ্টা করেও কারখানা বাঁচানো সম্ভব হল না!’’

Advertisement

সেই সঙ্গে এ রাজ্যের আর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘ব্রিজ অ্যান্ড রুফ’ নিয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে মোদী সরকার। নীতি আয়োগের সঙ্গে আলোচনার পরে ভারী শিল্প মন্ত্রক চায় ওই সংস্থার কৌশলগত বিলগ্নিকরণ (স্ট্র্যাটেজিক ডিসইনভেস্টমেন্ট) করা হোক। যার অর্থ, শেয়ার বাজারের মাধ্যমে সংস্থার বড় মাপের শেয়ার আগে থেকে নির্দিষ্ট দিনে দফায়-দফায় বিক্রি করা হবে অথবা নির্দিষ্ট সময় ধরে প্রতি দিন অল্প করে শেয়ার বিক্রি করা হবে। মন্ত্রকের কর্তাদের ধারণা, বিলগ্নিকরণ করে ভাল অর্থই আসতে পারে সরকারি কোষাগারে। মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্রিজ অ্যান্ড রুফ এবং হিন্দুস্তান কেব্‌লস নিয়ে ক্যাবিনেট নোট তৈরি হয়ে গিয়েছে। মন্ত্রিসভার অর্থ বিষয়ক কমিটির আগামী বৈঠকেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

ফোনের জন্য ‘জেলি ফিল্‌ড কেব্‌ল’ তৈরি করতে ১৯৫২ সালে রূপনারায়ণপুরে গড়া হয় হিন্দুস্তান কেব্‌লস। কিন্তু বাজারে ‘অপটিক্যাল ফাইবার কেব্‌ল’ চলে আসার পর থেকে কারাখানাটি ধুঁকতে শুরু করে। ২০০১ সালে উৎপাদন একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়। দু’বছর পরে কারখানার ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব যায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পুনরুজ্জীবন বোর্ডের (বিআরপিএসই) হাতে।

Advertisement

মাঝে আশার আলো দেখেছিল কারখানাটি। ২০১৩ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড এই কারখানা অধিগ্রহণে আগ্রহ দেখায়। আসানসোল থেকে জিতে সাংসদ হওয়ার পরে বাবুলও ভরসা দিয়েছিলেন, তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অরুণ জেটলি ও ভারী শিল্পমন্ত্রী অনন্ত গীতের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। অধিগ্রহণের ব্যাপারে আশ্বাসও মিলেছে। কিন্তু তার পরে বিষয়টি আর এগোয়নি। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, কারখানার প্রায় বত্রিশশো কোটি টাকার দেনা কে মেটাবে, তা নিয়েই জটিলতা দেখা দেয়।

এখন কারখানায় হাজারখানেক কর্মী রয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত বেতন মিলছে না। এখন ১৮ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানার পরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তাঁদের মধ্যে। প্রায় ৩৩ বছর ধরে কাজ করা সৌমিত্র চৌধুরীর মতে, ‘‘এর ফলে শুধু আমরা নয়, গোটা এলাকার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’ আবার সাধন মিশ্রের মতো কিছু কর্মীর বক্তব্য, ‘‘কারখানা চলবে না, সে তো বোঝাই যাচ্ছিল। এখন আমাদের পাওনাগন্ডা বুঝিয়ে দিলে সব মিটে যায়।’’ মন্ত্রী বাবুল জানান, কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হবে ২০০৭ সালের বেতনক্রমে, যা তাঁরা পেতেন না। ফলে, তাঁরা তুলনায় বেশি আর্থিক সুবিধা পাবেন।

কারখানা পুনরুজ্জীবনের আশ্বাস না মেটায় বাবুলকে দুষছে বাম ও তৃণমূল। আসানসোলের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী দাবি করেন, ‘‘বাবুল ভোটের প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তা যে ধাপ্পা, প্রমাণ হল।’’ বারাবনির তৃণমূল বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘পুনরুজ্জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে উনি (বাবুল) চমক দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ওঁর কোনও গুরুত্ব নেই, বোঝা গেল।’’ বাবুলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ইউপিএ সরকার শেষ পেরেক পুঁতে দিয়ে গিয়েছিল। আমরা কারখানা বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। এখন কেউ কালো পতাকা দেখালে, দেখতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement