সোমবার দিঘা মোহনায় পৌঁছেছে ইলিশ। নিজস্ব চিত্র
লকডাউন শিথিল হতেই বাঙালির জন্য এল সুখবর। মাছ ধরার মরসুমের শুরুতেই মৎস্যজীবীদের জালে ধরা পড়ল বঙ্গোপসাগরের ‘রুপোলি শস্য’। হাপিত্যেশ কাটিয়ে এখন শুধু ভোজনরসিক বাঙালির পাতে পড়ার অপেক্ষায় দিঘার ওই ইলিশ।
সোমবার দিঘা মোহনা মৎস্য নিলাম কেন্দ্রে প্রচুর ইলিশ মাছ দেখা গিয়েছে। এ দিন ভোরে ইলিশ ভর্তি বেশ কয়েকটি ট্রলার দিঘা মোহনায় এসে পৌঁছয়। সেগুলি আকৃতিতে যেমন অনেকটাই বড়, তেমনই দামও ছিল অপেক্ষাকৃত কম। ৮০০ গ্রাম থেকে এক কিলোগ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ নিলাম কেন্দ্রে বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কিলো দরে।
লকডাউন চলাকালীন গত ২৩ মার্চ থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপর কেন্দ্রীয় সরকার সমুদ্রে মাছ ধরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। গত ১৫ জুন কেন্দ্র সরকারের ‘ব্যান পিরিয়ডে’র সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে। এরপরেও স্থানীয়দের আপত্তিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার চারটি মৎস্য বন্দরের কোনও ট্রলার সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে পারেনি। সম্প্রতি গত ১ জুলাই দিঘা মোহনা মৎস্য নিলাম কেন্দ্র চালু হয়েছে। তার পরেই ট্রলারগুলি মাছ ধরতে রওনা গিয়েছে।
এ বছর লকডাউনে বঙ্গোপসাগরের দূষণ অনেকটাই কম ছিল। তাই প্রচুর ইলিশ দেখা যাবে বলে আগাম আশার কথা শুনিয়েছিলেন মৎস্যজীবীরা। সেই মাফিক বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার এক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই বাজারে এল দিঘার ইলিশ। এদিন চারটি ট্রলার মোট ৪৫০ কুইন্ট্যাল ইলিশ নিয়ে ফিরে এসেছে বলে ‘দিঘা মোহনা ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’ সূত্রের খবর।
দিঘা মোহনার এক মাছের আড়তদার রাধাশ্যাম দাস বলেন, ‘‘পরিমাণ কম হলেও আকৃতিতে অনেকটাই বড় আকারের ইলিশ পাওয়া গিয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বহু ট্রলার মাছ ধরে ফিরবে। তখন ইলিশ অনেকটাই মধ্যবিত্তের নাগালে চলে আসবে।’’ এক ট্রলার মালিক মনোরঞ্জন প্রধান বলেন, ‘‘গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে সমুদ্র কিছুটা উত্তাল রয়েছে ঠিক। তবে মাঝ সমুদ্রে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি এবং পূবালী হাওয়া দেখা দিয়েছে। এই আবহাওয়াতে ইলিশ মাছ ডিম পাড়ার জন্য সৈকতের ধারে আসার চেষ্টা করে। এই আবহাওয়া বজায় থাকলে কয়েকদিনের মধ্যেই ইলিশে ছেয়ে যাবে পুরো বাজার।’’
এ ব্যাপারে ‘দিঘা মোহনা ফিশ্যারম্যান অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস বলেন, ‘‘আগেই ডায়মন্ড হারবারে ইলিশ পাওয়া গিয়েছিল। তবে দিঘার ইলিশ নিয়ে এরাজ্যে লোকেদের কাছে আলাদা আগ্রহ বরাবরের। এবার সব রকমের আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ইলিশের আমদানি রেকর্ড তৈরি করবে বলেই মনে করছি।’’