সারানো হয়েছে ইয়াস-এ ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ। নিজস্ব চিত্র।
ইয়াস-এর পর এ বার জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে সুন্দরবনকে বাঁচানোই বড় চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের। এক দিকে বৃহস্পতিবার থেকে অমাবস্যার কটাল শুরু। অন্যদিকে, টানা কয়েক দিন ধরে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে সুন্দরবন-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনা উপকূলের একাধিক এলাকা জলমগ্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। ইয়াস বিধ্বস্ত এলাকাগুলি নতুন করে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই জোরকদমে চলছে বাঁধ মেরামতির কাজ। পাশাপাশি, উপকূলবর্তী কিছু এলাকা থেকে গ্রামবাসীদের সরিয়ে আনা হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে।
ইয়াস এবং ভরা কটালের জেরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় প্রায় ১৮০ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয় গোসাবা, সাগর, নামখানা, কুলতলি এবং পাথরপ্রতিমা ব্লকে। কিন্তু প্রশাসনের তৎপরতায় সর্বত্রই তড়িঘড়ি বাঁধ মেরামতিতে নেমে পড়ে সেচ দফতর। এ দিকে বৃহস্পতিবার থেকে অমাবস্যার কটাল এবং টানা কয়েকদিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় নদী ও সমুদ্রে জলস্ফীতির সম্ভাবনা রয়েছে। সুন্দরবনের যে সমস্ত নদী ও সমুদ্রবাঁধ ইয়াস-এর অভিঘাতে বেহাল হয়ে পড়েছিল সেগুলির অনেকটাই মেরামত করতে সক্ষম হয়েছে সেচ দফতর। কিন্তু যেগুলি বাকি রয়েছে সেখান থেকেই নোনা জল ঢুকে যাতে ফের এলাকা প্লাবিত না হয় সেজন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বাঁধ মেরামতির কাজ চলছে।
ভরা কটালের জলস্ফীতিতে এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়লেও প্রাণহানির ঘটনা যাতে না হয় সে বিষয়ে সক্রিয় জেলা প্রশাসন। বুধবার বিকেল পর্যন্ত সুন্দরবনের দ্বীপাঞ্চল এবং উপকূল এলাকার ২০ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছে। ইয়াস-এর সময় থেকে দুর্গত এলাকার যে সব মানুষ ফ্লাড সেন্টার এবং স্কুল বাড়িতে রয়েছেন তাঁদেরকে সেখানেই থাকতে বলা হয়েছে। বুধবার বিকেলে প্রশাসনের তরফে সাগর ব্লকের ভাঙন কবলিত ঘোড়ামারা দ্বীপের কয়েক হাজার মানুষকে সরিয়ে আনা হল মূল ভূখন্ডে। জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে রাখছি। বেহাল বাঁধগুলি সারিয়ে তুলতে দ্রুততার সঙ্গে কাজ চলছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় জল ঢোকার সম্ভাবনা থাকলেও আশা রাখছি বড় কোনও বিপর্যয় ঘটবে না।’’
ইয়াস বিধ্বস্ত সব এলাকাতেই প্রশাসনের আধিকারিক, বিধায়ক এবং সেচ দপ্তরের সমন্বয়ে বাঁধের কাজ চলছে। কটালের আগে ইয়াস কবলিত এলাকার বিধায়ক, মহকুমা শাসক এবং বিডিও-রা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করছেন। এ বিষয়ে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘বেশির ভাগ জায়গাতেই বাঁধ তৈরির কাজ প্রায় শেষ। যেগুলি বাকি আছে তাড়াতাড়ি শেষ করতে বলেছি। এ বার ঘোড়ামারা, মৌসুনির মত সুন্দরবনের ভাঙন কবলিত দ্বীপগুলির উপর বিশেষ নজর রাখা হবে।’’