ফাইল চিত্র।
সল্টলেক বা বিধাননগরের পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আবেদন সংক্রান্ত মামলার শুনানি বুধবার শেষ হয়েছে। তবে এ দিন রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। তাঁর প্রশ্ন, ভোটে বাহিনী নিয়োগের নির্দেশ আদালত দিতে পারে কি? তবে কলকাতা পুরভোটের মতো এ বারেও কেন্দ্রের তরফে কোর্টে জানানো হয়েছে, আদালত নির্দেশ দিলে বাহিনী দিতে তাদের কোনও সমস্যা নেই। শনিবার বিধাননগর-সহ চার পুর নিগমে ভোট। তার ৪৮ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য জল্পনা রয়েছে। অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কলকাতা পুরভোটের ক্ষেত্রেও শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের বদলে রাজ্য পুলিশকেই দায়িত্ব দিয়েছিল উচ্চ আদালত।
মামলাকারীর আইনজীবী পিঙ্কি আনন্দ এ দিন আদালতে ২০১৫ সালের পুরভোটের কথা তুলে ধরেন। অভিযোগ, সে-বার বিধাননগর জুড়ে ব্যাপক হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকায় তেমন কিছুই ঘটেনি। এ বার ভোটের আগেই বিরোধী দলের কর্মীদের মারধর, পার্টি অফিস ভাঙচুর হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে।
কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে আদালত নির্দেশ দিতে পারে কি না, এ দিন তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি। পিঙ্কিদেবী জানান, সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। তারা সিদ্ধান্ত নিতে অপারগ হলে কোর্ট নির্দেশ দিতেই পারে। ত্রিপুরার পুরভোটের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে কোর্টে গিয়েছিল তৃণমূল।
কমিশনের আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র জানান, তাঁরা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ২০১৫ সালের পরে বহু দিন কেটেও গিয়েছে। বিধাননগরের বিভিন্ন এলাকায় রাজ্য পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে। অবাধ, শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ ভোট নিয়ে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গেও আলোচনা এবং পরিকল্পনা হয়েছে। সবিস্তার পরিকল্পনার কথাও বলেন তিনি। রাজ্য সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেই নিরাপত্তা থাকবে, এমন নয়। বিধানসভা ভোটে বাহিনীর গুলিতে মৃত্যুর প্রসঙ্গও তোলেন তিনি।
কমিশনের পরিকল্পনা শুধু কাগজেকলমে থাকবে, না, বাস্তবায়িত হবে— কমিশনের কৌঁসুলির কাছে তা জানতে চায় কোর্ট। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, কলকাতার পুরভোটে মানুষ অভিযোগ জানিয়েছেন, বিরোধী প্রার্থীরা মার খেয়েছেন। কমিশন আদৌ কোনও কাজ করছে কি না, সেই প্রশ্ন ওঠে কোর্টে। এই ঘটনা কমিশনের ব্যর্থতা তুলে ধরে কি না, তাও জানতে চায় আদালত। তবে জয়ন্তবাবুর বক্তব্য, রাজনৈতিক দলগুলি পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায়। কমিশন অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। তিনি দাবি করেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন কোনও দল বা সরকারের হয়ে কাজ করে না। বরং সংবিধান মেনে চলে। জয়ন্তবাবুর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা হবে কি না, কোর্ট সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কোর্টের মন্তব্য, সে-ক্ষেত্রে কিছু হলে কমিশন দায়বদ্ধ থাকবে। সিসি ক্যামেরা-সহ বিভিন্ন বিষয়কে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন কমিশনের কৌঁসুলি।