প্রতীকী ছবি।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক ফার্মাসিস্ট সোনারপুরে চুরির টিকা বিক্রির অভিযোগে ধরা পড়েছেন। আর নদিয়ার সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ২২০ ডোজ় (২২ ভায়াল) কোভ্যাক্সিন টিকা লোপাট হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন জেলার সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্ত্রী সাগরিকা মণ্ডল।
ওই সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্ত্রীর অধীন বিভিন্ন সিভিসি বা টিকাকরণ কেন্দ্রগুলির জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে পাঠানো টিকা সংরক্ষিত রাখা হয় কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (জেএনএম) কোল্ড চেন ইউনিটে। সেখান থেকেই টিকা উধাও হয়েছে বলে ওই হাসপাতালের অধ্যক্ষ অনিরুদ্ধ নিয়োগীর কাছে ২৪ জুলাই লিখিত ভাবে অভিযোগ জানান তিনি।
রাজ্য জুড়ে করোনা টিকার আকাল নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ তুঙ্গে। কোভ্যাক্সিনের আকালই বেশি। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতাল থেকে কোভ্যাক্সিনের ২২০ ডোজ় লোপাটের অভিযোগ ঘিরে প্রশ্ন উঠছে, মোটা টাকায় ভ্যাকসিন পাচারের চক্র কি স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরেও সক্রিয়? ‘‘আমার যা বক্তব্য, জেএনএমের অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়ে তা জানিয়েছি,’’ বুধবার বলেন সাগরিকাদেবী।
অনিরুদ্ধবাবু কোভিড আক্রান্ত হয়ে আপাতত হোম আইসোলেশনে আছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন ডাকে চিঠি পেয়েছি। আমি ডেপুটি সিএমওএইচ(৩) অতসী মণ্ডলকে বিষয়টি দেখতে বলেছি। তদন্ত হচ্ছে।’’
জেএনএমের কোল্ড চেন ইউনিটে ওই মেডিক্যাল কলেজের নিজেদের বরাদ্দ টিকার পাশাপাশি জেলার এসিএমওএইচ বা সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্ত্রীর অধীন টিকা কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ ভ্যাকসিনও সংরক্ষিত থাকে।
অভিযোগপত্রে সাগরিকাদেবী লিখেছেন, গত ২২ জুলাই জেলা স্বাস্থ্য দফতর ২৫০ ডোজ় কোভ্যাক্সিন পাঠায়। তা জেএনএমে রাখা হয়। আগে থেকে সেখানে তাঁর কেন্দ্রগুলির জন্য বরাদ্দ আরও ২০০ ডোজ় কোভ্যাক্সিন সংরক্ষিত ছিল। সেখান থেকে ২৪ জুলাই তিনি ২৩০ ডোজ় কোভ্যাক্সিন উপভোক্তাদের দেন। পরে বাকি টিকার জন্য ফোন করায় জেএনএমের টিকা সংক্রান্ত নোডাল অফিসার অয়ন ঘোষ জানান, কোভ্যাক্সিনের ভাঁড়ার শূন্য! সেই সময় অয়নবাবু আরও অভিযোগ করেন যে, সাগরিকাদেবীই নাকি তাঁর কাছ থেকে বাড়তি আরও ৩০ ডোজ় কোভ্যাক্সিন নিয়েছেন ধার হিসেবে! অয়নবাবুর এই অভিযোগ মিথ্যা বলে নিজের চিঠিতে দাবি করেছেন সাগরিকাদেবী। তাঁর কেন্দ্রগুলির জন্য বরাদ্দ বাকি ২২০ ডোজ় কোভ্যাক্সিন কোথায় গেল, তা জানতে চেয়েছেন তিনি। তাঁর চিঠির শেষে টিকা নিয়ে দুর্নীতির সুস্পষ্ট ইঙ্গিতও রয়েছে।
অয়নবাবু বলেন, ‘‘রোজ অনেক টিকা অ্যালোকেশন রি-অ্যালোকেশন হয়। ২৪ তারিখ সকালে সাগরিকাদেবীর সঙ্গে আমার কথা হয়। কিন্তু ঠিক কী কথা হয়েছিল, স্পষ্ট মনে পড়ছে না। তবে টিকার সব হিসেব নথিভুক্ত থাকে। বিষয়টি ডেপুটি সিএমওএইচ(৩) অতসী মণ্ডল দেখছেন।’’ অতসীদেবী জানান, ২২ জুলাই এসিএমওএইচের নামে ২৫০ ডোজ কোভ্যাক্সিন এসেছিল, এটা ঠিক। কিন্তু তার আগে ১৬ জুলাই এসিএমওএইচের নামে ২০০ ডোজ় কোভ্যাক্সিন আসে, যা এসিএমওএইচ অফিস থেকে ব্যবহার করা হয়। ১৯ জুলাই এসিএমওএইচের নামে আরও ২২০ ডোজ় কোভ্যাক্সিন আসে। তা-ও পুরো ব্যবহার করা হয়েছে। আগে থেকে ২০০ ডোজ় কোভ্যাক্সিন সঞ্চিত থাকার ব্যাপারে সাগরিকাদেবী যা বলছেন, সেই টিকার নথিপত্র এখনও মিলছে না। ‘‘বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি,’’ বলেন অতসীদেবী।