অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যেই তত ক্ষণে মৃত্যু হয়েছে রোগীর। পাশে বসে চালক। শনিবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। ফাইল চিত্র।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে খাতায়কলমে ভর্তির পরেও হাসপাতাল চত্বরেই অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যে প্রায় দু’ঘণ্টা পড়ে থেকে করোনা রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল শনিবার। এই ঘটনায় দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
মৃত রোগীর পরিবারের লোকেরা আপাতত বাড়িতে কোয়রান্টিনে রয়েছেন। সেখান থেকেই রবিবার হোয়াটসঅ্যাপে মেডিক্যালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতের ছেলে। সুপার এ দিন বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি। একটি তদন্তকারী দল তৈরি করা হচ্ছে, যারা গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবে। কোভিড রোগী হাসপাতালে এলে তাঁকে ট্রলিতে নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য ১৮ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর বিশাল টিম রয়েছে। তার পরেও কেন ওই রোগীকে সময় মতো ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়নি, সেটাই দেখা হচ্ছে।’’
নৈহাটির হাজিনগর ফাঁড়ির বাসিন্দা বছর ষাটের ওই রোগী গত ২ জুলাই কল্যাণী কার্নিভাল কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা বা কো-মর্বিডিটিও ছিল। ৩ তারিখ তাঁকে মেডিক্যালে রেফার করা হয়। ৪ তারিখ অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁকে মেডিক্যালে আনার পরে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। তীব্র শ্বাসকষ্টে রোগীর অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে বলে অ্যাম্বুল্যান্স চালক বারবার জানালেও ইমার্জেন্সিতে চিকিৎসকেরা কান দেননি বলে অভিযোগ। প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট পরে কাগজেকলমে রোগীকে ভর্তি করা হলেও গ্রিন বিল্ডিং-এর উপরে তাঁকে ট্রলি করে তোলার লোক মেলেনি। আরও এক ঘণ্টা পড়ে থেকে অ্যাম্বুল্যান্সেই মারা যান রোগী।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং অনভিপ্রেত ঘটনা। কোনও ভাবেই এই রকম ঘটনা বরদাস্ত করা যাবে না। যথোপযুক্ত ভাবে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে এবং দোষ প্রমাণিত হলে কড়া শাস্তি পেতে হবে দোষীদের।’’ তবে জেলার বিভিন্ন কোভিড হাসপাতালে কো-মর্বিডিটি চিকিৎসার পরিষেবার ঘাটতির কথা মেনে নিয়ে স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, এখনই এই পরিস্থিতি বদলাবে না। কারণ, জেলায় সত্যিই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও পরিষেবার ঘাটতি রয়েছে। ফলে কোনও করোনা রোগীর অন্য কোনও শারীরিক জটিলতা তৈরি হলে হয়তো কলকাতাতেই রেফার করতে হবে। মেডিক্যাল কলেজের সুপার বলেন, ‘‘রোগী খাতায় কলমে মেডিক্যালে সকাল ৮টা ৫মিনিটে ভর্তি হওয়ার পর কেন কোনও ওয়ার্ডে পৌঁছলেন না, ভর্তি থেকে ওয়ার্ডে পৌঁছনোর মাঝে ‘ট্রানজিট টাইম’ এ রোগী কী পরিস্থিতিতে ছিলেন সেটা তদন্তকারীরা দেখবেন। সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হবে।’’