রাজীব কুমার। —ফাইল চিত্র।
রাজীব কুমারকে দেওয়া রক্ষাকবচ প্রত্যাহার করল কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার হাইকোর্টের বিচারপতি মধুমতি মিত্র তাঁর রায়ে জানিয়ে দেন, রাজীব কুমারের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে এখনও রক্ষাকবচ বজায় রাখলে সেটা তদন্তে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা হবে। সে কারণেই তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হল বলে এ দিন তাঁর রায়ে জানিয়েছেন বিচারপতি মিত্র।
এ দিন আদালতের রায় কার্যত কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধেই গেল বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ। তাঁদের মতে, রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করার পথে সিবিআইয়ের আর কোনও বাধা রইল না।
অন্য দিকে, সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনই ফের রাজীবকে জেরা করার জন্য সমন পাঠাবে তারা। শনিবারই রাজীবকে হাজির হতে বলা হবে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের সিবিআই দফতরে। রাজীব যদি জেরায় কোনও সহযোগিতা না করেন, তবে গ্রেফতারির পথেই যাবে কেন্দ্রীয় ওই গোয়েন্দা সংস্থা— এমনটাই সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: নবান্ন অভিযান ঘিরে হাওড়ায় ধুন্ধুমার, পুলিশের লাঠিচার্জ, পাল্টা ইটবৃষ্টি
এ দিন বিচারপতি মধুমতি মিত্রের রায়ের ছত্রে ছত্রে রাজীব কুমারের ভূমিকার সমালোচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘রাজীব কুমার বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)এর এক জন অন্যতম সদস্য ছিলেন। তদন্তের স্বার্থে তিনি প্রচুর জিনিস সংগ্রহ করেছিলেন। রাজীব কুমারকে সিবিআই টার্গেট করেছে, এই অভিযোগ আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।’’
বিচারপতি মিত্র এ দিন তাঁর রায় পড়ে শোনানোর সময় আরও বলেন, ‘‘বার বার প্রশ্ন করা, জেরা সবই তদন্তের মধ্যেই পড়ে। এমনকি গ্রেফতার করা বা কাউকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করলে কারও মর্যাদা নষ্ট হয় না।’’ তাঁর মতে, ‘‘অবাধ ও সুষ্ঠু তদন্তে এটা প্রয়োজন হতেই পারে।” সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য পুলিশকে সব ধরনের সাহায্য এবং সহযোগিতা করতে বলেছে বলে এ দিন মন্তব্য করেন বিচারপতি মিত্র। তাঁর কথায়, ‘‘মামলাকারী বলেছেন যে, তাঁর ব্যক্তিগত সম্মানহানি হচ্ছে। জেরা তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে মর্যাদাহানির কোনও ভিত্তি আছে বলে মনে হয় না।’’
আরও পড়ুন: বেহালায় বিজেপি কর্মীর দোকান ভাঙচুর, জ্বালিয়ে দিল বাড়ি, ফুটেজ দেখে দুষ্কৃতীদের চিনছে পুলিশ
আইনজীবীদের একটা অংশের মতে, এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজীব কুমারের আইনি কোনও ঢাল পেতে গেলে অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে হবে। কিন্তু তাঁরাই আবার জানাচ্ছেন, আগামী দু’দিন শনি এবং রবিবার আদালত বন্ধ। ফলে গোটা পরিস্থিতি রাজীবের বিপদ আরও বাড়াল বলেই মনে করছেন আইনজীবীদের ওই অংশ।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই কি আদৌ সারদা মামলায় নোটিস দিয়ে সমন পাঠাতে পারে? কতটা আইনসিদ্ধ সেই প্রক্রিয়া? সে সবকে চ্যালেঞ্জ করেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। মামলা চলাকালীন দফায় দফায় আদালত তাঁর আবেদন মেনে গ্রেফতারির বিরুদ্ধে আইনি রক্ষাকবচের মেয়াদও বাড়ায়।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হাইকোর্টে চলে মামলার সওয়াল-জবাব। রাজীব কুমারের আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় ২৩ দিন ধরে সওয়াল করেন। অন্য দিকে, সিবিআইয়ের তরফে সওয়াল করেন ওয়াই জে দস্তুর। তিনি সাত দিন সময় নেন মিলনবাবুর সওয়ালের জবাব দিতে। বুধবার সেই সওয়াল-জবাব পর্ব শেষ হয়। এর পরেই বিচারপতি জানিয়ে দেন, শুক্রবার রায় ঘোষণা। সেই মতো এ দিন রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি মধুমতি মিত্র।