Hanuman Jayanti

কোর্টের নির্দেশ মেনে মোতায়েন আধাসেনা, মিছিলের অনুমতিতে কড়াকড়ি, হনুমান জয়ন্তীতে সতর্ক রাজ্য

হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী হনুমান জয়ন্তীর দিনে বাড়তি নিরাপত্তার স্বার্থে তিন কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য। যা কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৫৮
Share:

হনুমান জয়ন্তীর দিনে বাড়তি নিরাপত্তার স্বার্থে তিন কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য। ফাইল চিত্র।

রামনবমীর মতো গোলমাল যেন ফের হনুমান জয়ন্তীতে না হয়। এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী হনুমান জয়ন্তীর দিনে বাড়তি নিরাপত্তার স্বার্থে তিন কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য। যা কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।

Advertisement

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে হুগলি, ব্যারাকপুর এবং কলকাতায় ওই বাহিনী থাকবে। সেই সঙ্গে থাকবে রাজ্যের পুলিশও। সম্প্রতি রামনবমীর মিছিল ঘিরে যথেষ্ট গোলমালের সাক্ষী থেকেছে হাওড়া। সেখানে আলাদা ভাবে কোনও আধাসেনা মোতায়েনের কথা বুধবার বলা হয়নি। তবে প্রশাসনিক সূত্রে দাবি, পরিস্থিতি বুঝে যে কোনও সময়ে কলকাতায় রাখা আধাসেনাকে হাওড়ায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে।

হনুমান জয়ন্তীর মিছিল ঘিরে যাতে কোনও রকম গোলমাল না ছড়ায়, তা নিশ্চিত করতে রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীও মোতায়েনের নির্দেশ দেয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই নির্দেশ মানার পাশাপাশি, বিষয়টি নিয়ে আলাদা ভাবে বিশেষ সতর্কতা নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। কয়েক দফা পদক্ষেপও করেছে তারা। যেমন, মিছিলে অস্ত্র বা লাঠি রাখা যাবে না, বাইক মিছিল করা যাবে না, ডিজে-বক্স বাজানো যাবে না — এ রকম বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কড়াকড়ি করা হয়েছে মিছিল বা শোভাযাত্রার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে। অনেকেরই প্রশ্ন, কোর্টের নির্দেশে রাজ্য প্রশাসন যে কাজ করছে, এই সমস্ত সাবধানতা আগে অবলম্বন করলে, রামনবমীর মিছিল ঘিরে গোলমাল এত ছড়াতে পারত কি? কেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে বার বার কোর্টের নির্দেশের পরে রাজ্য প্রশাসনের টনক নড়ছে, সেই প্রশ্নও উঠছে বিভিন্ন মহলে।

Advertisement

বুধবার দিঘায় অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতের নির্দেশ সম্পর্কে বলেছেন, “হাই কোর্টের রায় আমাদের পক্ষে ভাল হয়েছে। প্রশাসনও নিজের মতো করে শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ করতে পারবে।” আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে হনুমান জয়ন্তী পালনের জন্য এ দিন অন্যান্য রাজ্যকেও নির্দেশিকা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

রামনবমীর মিছিল ঘিরে হাওড়া, রিষড়ায় গোলমাল নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই মামলায় রাজ্যের কাছ থেকে এ দিন রিপোর্ট চেয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। ওই রিপোর্ট জমা পড়ে আদালতে। এ দিন সকালে সেই মামলার শুনানিতে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে রীতিমতো সমালোচনার সুর শোনা যায়ডিভিশন বেঞ্চে।

প্রসঙ্গত, গোলমাল ঠেকাতে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আগেই উঠেছিল। এ দিন কোর্টের পর্যবেক্ষণ, পুলিশের কি যথাযথ প্রস্তুতি ছিল? গোলমালের আঁচ পাওয়ার ক্ষেত্রে গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথাও শোনা গিয়েছে কোর্টে। প্রাথমিক শুনানির পরে রাজ্যকে আধাসামরিক বাহিনীর সাহায্য নেওয়ার নির্দেশ দেয় কোর্ট। গোলমাল ঠেকাতে এবং নির্বিঘ্নে হনুমান জয়ন্তীর অনুষ্ঠান করতে রাজ্য কী পদক্ষেপ করবে, তা জানানোর জন্য এক ঘণ্টার সময় বেঁধে দেয় কোর্ট।

এক ঘণ্টা পরে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় রাজ্যের বক্তব্য কোর্টে জানান। তার পরেই কোর্টের নির্দেশ, রাজ্য আধা সামরিক বাহিনী চাইবে এবং কেন্দ্র সেই আর্জি মঞ্জুর করে সাহায্য করবে। হনুমান জয়ন্তী নিয়ে কোনও রাজনৈতিক নেতা যাতে বক্তৃতা না করেন, সেই নির্দেশও কোর্ট দিয়েছে। এ দিন এক বিচারকের চিঠির প্রসঙ্গও কোর্টে উঠেছে। হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে পাঠানো চিঠিতে নিম্ন আদালতে কর্মরত ওই বিচারক জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ি রিষড়ায়। সেখানে তাঁর পরিবার থাকে। গোলমালের পরিস্থিতিতে তিনি পরিবারকে নিয়ে রীতিমতো নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।

কোর্টের নির্দেশের পরেই বৈঠকে বসে রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের শীর্ষ কর্তারা ছাড়াও জেলাশাসক এবং এসপিরা তাতে যোগ দেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, সেই বৈঠকেই ঠিক হয়, হুগলি, কলকাতা এবং ব্যারাকপুরে এক কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। রাতেই ওই জায়গাগুলিতে বাহিনী পৌঁছবে এবং বিভিন্ন সংবেদনশালী এলাকায় রুট মার্চ করবে। সঙ্গে ওই এলাকাগুলিতে অতিরিক্ত সংখ্যায় রাজ্য পুলিশও থাকবে। এ ছাড়া, মিছিলে যোগদানকারীর সংখ্যা বেঁধে দেওয়া, মিছিলের পথের অনুমতি দেওয়ার আগে নিরাপত্তা যাচাই, স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকা তৈরি, তাঁদের সচিত্র পরিচয়পত্র দেওয়া ইত্য়াদির কথাও ভেবেছে রাজ্য।

কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, শহরে ৫-৬টি মিছিল ও ৭০-৮০টি মন্দিরে হনুমান পুজো হওয়ার কথা। প্রতি মিছিলে সর্বোচ্চ ১০০-১৫০ জন থাকতে পারবেন। কোথা থেকে কত দূর পর্যন্ত মিছিল যাবে অর্থাৎ মিছিলের দূরত্বও ঠিক করে দেবে পুলিশ। কোনও রাস্তা দিয়ে মিছিল গেলে সেখানে গোলমালের আশঙ্কা তৈরি হলে, পুলিশ সেই রাস্তা বদলে দিতে পারে। মিছিলের সামনে এবং পিছনে পুলিশ থাকবে। থাকবেন অতিরিক্ত এবং ডেপুটি কমিশনার পদের অফিসারেরা। পুলিশের শরীরে ক্যামেরা লাগানো থাকবে। সব মিছিলের ভিডিয়ো রেকর্ডিং হবে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনে ব্যারিকেড ও গার্ডরেল ব্যবহার করবে পুলিশ। শহরজুড়ে ৫০টি জায়গায় অতিরিক্ত সিসি-ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। বন্দোবস্ত হচ্ছে মোটরবাইক এবং গাড়িতেও পুলিশি টহলের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement