তুঙ্গে জিটিএ ভোটের প্রস্তুতি। —নিজস্ব চিত্র।
বছর পাঁচেক ধরে কেবলমাত্র প্রশাসক বদলেছে গোর্খা আঞ্চলিক পরিষদ (গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ)-তে। তবে ২৬ জুন, রবিবার সে ছবিতে বদল ঘটবে। ওই দিন জিটিএ-র দ্বিতীয় নির্বাচন। ২৯ জুন যার ফলাফল ঘোষিত হবে।
পাহাড়ে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের দাবিতে আগে থেকেই এই নির্বাচনের বিরোধিতা করছে বিমল গুরুংয়ের দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। এ দাবিতে অনশনেও বসেছিলেন মোর্চা প্রধান-সহ দলের কর্মী-সমর্থকেরা। জিটিএ নির্বাচনে তাঁরা ভোট দেবেন না বলেও সাফ জানিয়েছেন গুরুং-সহ মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘আমি বা বিমল গুরুং কেউ ভোট দেব না। আমরা জিটিএ নির্বাচনে বিরুদ্ধে। দলের কর্মী-সমর্থকদের কারা ভোট দেবেন বা দেবেন না, সেটা তাঁদের বিষয়৷ তবে রবিবার আমরা ভোট দিতে যাব না।’’ মোর্চা নেতৃত্ব ভোট বয়কট করলেও দলের কর্মী-সমর্থকেরা নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ালে সমর্থন করবে বলে সূত্রের খবর। যদিও প্রকাশ্যে সে কথা জানাননি তাঁরা।
প্রথম বারের মতো এ বারও জিটিএ নির্বাচনে নির্দল প্রার্থীদের ভিড়। ৪৫টি আসন মিলিয়ে মোট ১৮৭ জনই নির্দল প্রার্থী। তার মধ্যে লড়াই মূলত হামরো পার্টি এবং ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার মধ্যে। ৪৫টি আসনের প্রতিটিতেই নিজেদের প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে শুধুমাত্র হামরো পার্টি। অন্য দিকে, অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা ৩৬টি আসনে প্রার্থী দিলেও বহু আসনে নির্দলদের সমর্থন করছে। তৃণমূলের প্রার্থীদের লড়াই ১০টি আসনে।
এই নির্বাচনে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল যে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সঙ্গে একসঙ্গে লড়ছে, তা প্রথম থেকে স্পষ্ট ছিল। মনোনয়নের সময় অনীত থাপার দলের সদস্য অজয় এডওয়ার্ড এ নিয়ে প্রকাশ্যেই মতপ্রকাশ করেন। যদিও দু’দলের নেতৃত্বই সে কথা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, ‘‘জিটিএ-র কোনও আসনেই আমরা এক হয়ে লড়াই করছি না।’’ ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সাধারণ সম্পাদক অমর লামার দাবি, ‘‘জিটিএ বোর্ড আমরাই গঠন করব। ৩৬টি আসনে প্রার্থী দিলেও বাকি আসনগুলোতে আমরা নির্দলদের সমর্থন করছি।’’ এই একই দাবি করেছে হামরো পার্টিও। দলের মুখ্য প্রবক্তা প্রমস্কর ব্লন বলেন, ‘‘আমাদের জয় নিশ্চিত। নির্দলদের নিয়ে কোনও চাপ নেই। চুপচাপ ভোটদান করবে পাহাড়ের মানুষ।’’
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথম জিটিএ নির্বাচন হয়। তাতে বোর্ড গঠন করেন বিমল গুরুংরা। ২০১৭ সালে সে বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পাহাড়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছিল। তার পর থেকে জিটিএ-তে শুধুমাত্র প্রশাসক বদল হয়েছে। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে শুধুমাত্র প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমেই চলছে জিটিএ।
নির্বাচনের আগের দিন পাহাড়ে প্রস্তুতি তুঙ্গে। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এখানে মোট ১৮৯টা ভোটদান কেন্দ্র রয়েছে। প্রতি বুধে ছ’জন করে ভোটকর্মী যাবেন। সঙ্গে অতিরিক্ত কর্মী রিজার্ভে রয়েছেন। প্রয়োজনে পরিস্থিতি অনুযায়ী তাঁদের কাজে লাগানো হবে। সব মিলিয়ে দেড় লাখের বেশি কর্মী রয়েছেন।’’