ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি অনীত থাপা। —নিজস্ব চিত্র।
প্রচারের চমক নেই। নেই জাঁকজমকের ডঙ্কা বাজানো। বরং পাহাড়ের গ্রামে গ্রামে ঘুরে দলীয় প্রার্থীদের জন্য ভোটের আবেদন করেছেন ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা (বিজিপিএম)-র সভাপতি অনীত থাপা। সঙ্গে ছিল, দলের সংগঠনকে শক্তিশালী রাখার কাজও। পাহাড়ের ‘বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে রাজনীতি করার’ ফল হাতেনাতেই পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন অনীত। বুধবার জিটিএ-র ৪৫টি আসনের মধ্যে ২৭টি দখল করেছেন বিজিপিএম প্রার্থীরা। কোন জাদুতে পাহাড়ের দখল নিলেন অনীত?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, পাহাড়ে ‘পকেট রুট’-এ অনীতের প্রচারই কামাল করেছে। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে ভোটপ্রচার সারলেও অনীতের দূরদর্শিতার কাছে ‘হেরে’ গিয়েছে জিটিএ নির্বাচনের বিজিপিএম-এর ‘প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী’ হামরো পার্টি। পাহাড়ের অন্যান্য দলে দোলাচল চললেও অনীতের দলের অন্দরে তিনিই শেষ কথা। হাল সামলাতে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক অমর লামা।
গোর্খা আঞ্চলিক পরিষদ (গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ)-এর নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশের পরই প্রথম ১০টি আসনে প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করে তৃণমূল। এর পরই ৪৫টি আসনের মধ্যে ৩৬টিতে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলেও বাকি ৯টি আসনে নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করেছে অনীতের দল। অনেকের মতে, জিটিএ নির্বাচনে সেটিই ছিল অনীতের তুরুপের তাস! অথচ, মার্চে দার্জিলিং পুরসভা নির্বাচনের ৩২টি আসনের মধ্যে ১৮টিই দখল করেছিল অজয় এডওয়ার্ডসের হামরো পার্টি। কিন্তু, জিটিএ নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে হামরো পার্টির তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছেন অনীতরা।
গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
এই ভোটে কার্শিয়াং থেকে নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন অনীত। তাঁর প্রচারের ধরনও ছিল ‘অন্য ধরনের’। জাঁকজমক নয়, পাহাড়ের গ্রামে গ্রামে গিয়ে ‘পকেট রুটে’ প্রচার সেরেছিলেন অনীত। শুধুমাত্র দার্জিলিং বা কার্শিয়াংকেন্দ্রিক প্রচার নয়। কালিম্পং থেকে মিরিক— কোথাও ভোটপ্রচার বাদ রাখেননি। সে তুলনায় বিজিপিএম-এর ‘প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী’ হামরো পার্টির শক্ত ঘাঁটি ছিল শুধুমাত্র দার্জিলিংকেন্দ্রিক। ফলে সেখানেই বেশির ভাগ প্রচার করেছে তারা।
বুধবার গণনার সকাল থেকেই আসনসংখ্যায় এগিয়ে যায় অনীতের দল। গণনা শেষে দেখা যায়, ৪৫টির আসনের মধ্যে ২৭টিতে দখল করেছে বিজিপিএম। হামরো পার্টির দখলে এসেছে মোটে ৮টি আসন। তুলনায় প্রথম বার লড়েই তৃণমূলের ঝুলিতে রয়েছে ৫টি আসন। কংগ্রেসে ৫টি এবং বাকি ৫টিতে জিতেছেন নির্দল প্রার্থী। কার্শিয়াংয়ের ১১টি-সহ দার্জিলিং এবং কালিম্পংয়ের ৮টি করে আসন জিতেছেন অনীতরা। অন্য দিকে, শুধুমাত্র দার্জিলিংকে কেন্দ্র করেই ৮টি আসনে জয়লাভ করেছে হামরো পার্টি৷
জিটিএ দখলের পর উল্লাসে মাতলেন বিজিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
জয়ের পর স্বাভাবিক ভাবেই খুশির হাওয়া অনীতদের দলীয় অফিসে। এই সাফল্যের কারণও জানিয়েছেন তিনি। অনীত বলেন, ‘‘আবেগের রাজনীতি আর নয়। পাহাড়ে বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে রাজনীতি করতে হবে। এই ভাবনা নিয়েই এখানে কাজ করছিলাম। বিভিন্ন নির্বাচন এসেছে আর আমাদের দল এগিয়েছে। কখনও থেমে যাইনি আমরা।’’ ভবিষ্যতের লক্ষ্যও স্থির তাঁর। অনীত বলেন, ‘‘অনেক চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে জয় এলেও আমাদের বোর্ডের কাজে সাধারণ মানুষ খুশি হলে তবেই আমরা জয়ী হব। জনসাধারণের দেওয়া ভোটকে সম্মান দিতে হবে। পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখতে হবে৷’’
বিজিপিএম-এর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হলেও ফলাফলের নিরিখে অনেক পিছিয়ে পড়া হামরো পার্টি অবশ্য দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। চলতি বছরের গোড়ায় দলের পথচলা শুরু হয়েছিল। তবে হামরো পার্টির প্রধান অজয় এডওয়ার্ডসের মতে, নতুন দল হিসাবে জিটিএ-তে ৮টি আসন দখল করাকে ‘সাফল্য’ হিসাবেই দেখছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা জয়লাভ করতে পারিনি বলে অবশ্যই দুঃখ হচ্ছে। শুধুমাত্র দার্জিলিং সদর বা পুর এলাকাগুলোর ভোট পেয়েছি। তার পরও আমরা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছি। মাত্র ছ’মাসের ব্যাবধানে দ্বিতীয় স্থানে আসাটাও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। অনীত থাপা এবং তাঁর দলকে অনেক শুভেচ্ছা। তবে পাহাড়ে জনতার রাজ চলে এসেছে। আমরা বিরোধী আসনে রয়েছি। দেখা যাক, কত জন নির্দল প্রার্থী আমাদের সঙ্গ দেন। বিগত দিনে জিটিএ-তে যে দুর্নীতিগুলো হয়েছে, এ বার আর তা হতে দেব না।’’