নেত্রীর নিষেধ সত্ত্বেও চলছে গোষ্ঠী-সংঘর্ষ

দলে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব বরদাস্ত না করার বার্তা বরাবরই দিয়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় বার ভোটে জিতেই গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব ঠেকাতে সংগঠনে কিছু রদবদলের সিদ্ধান্তও নিয়েছেন।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৬ ০৪:১৫
Share:

দলে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব বরদাস্ত না করার বার্তা বরাবরই দিয়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় বার ভোটে জিতেই গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব ঠেকাতে সংগঠনে কিছু রদবদলের সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও শাসক দলে অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং তার জেরে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ বেড়েই চলেছে। তৃণমূল নেতৃত্বও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

Advertisement

ভোটের ফল বেরনোর পর থেকেই বেহালা, বেলেঘাটা, মানিকতলা, কসবা এবং তিলজলায় তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মীর মদতে বাম-সহ অন্যান্য বিরোধী দলের উপর হামলার অভিযোগ উঠছে। তার উপরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মারামারিতেও বিভিন্ন জায়গায় আম জনতার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। যেমন, বেলেঘাটা, রাজাবাজার, ফুলবাগান, নারকেলডাঙা, দর্জিপাড়া, সোনাগাছি-সহ কয়েকটি জায়গায় ক্ষমতা দখল করে প্রোমোটারি এবং তোলাবাজির কারবারে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা নিয়ে প্রায় প্রতি দিনই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ লেগে রয়েছে।

পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝে উত্তর কলকাতার বেশ কয়েক জন তৃণমূল নেতা এবং কাউন্সিলর বিষয়টি নিয়ে এলাকার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন। জানানো হয়েছে কলকাতা জেলার তৃণমূল সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও।

Advertisement

তৃণমূলেরই একাংশের অভিযোগ, বেলেঘাটার গোলমালে মদত দিচ্ছেন সেখানকার বিধায়ক পরেশ পাল। গত ১৯ মে ভোটের ফল বেরনোর পর রাতে বেলেঘাটার রাসমণি বাজারের কাছে তৃণমূলের কার্যালয় মন্টু স্যানাল ভবনে হামলা হয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, সেখানে তখন শঙ্কর চক্রবর্তী (কানপুড়িয়া) ও তৃণমূলের আরও কয়েক জন কর্মী-সমর্থক ছিলেন। মার খান এক কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীও। চাউল পট্টি রোডের বাসিন্দা তৃণমূলের এক মহিলা কর্মীর উপরেও হামলা হয়। এই ঘটনায় অভিযুক্ত পরেশবাবুর সহযোগী
বলে পরিচিত রাজু নস্কর, রণবীর সাহা-সহ কয়েক জন। এই ঘটনার জেরে নব্য তৃণমূলের হাতে আদি তৃণমূলের মার খাওয়ার অভিযোগ জমা পড়ে দলীয় নেতৃত্বের কাছে।

মধ্য কলকাতার এক তৃণমূল বিধায়কের কথায়, ‘‘এক সময় শঙ্কর ও তার দলবল পরেশ পালের সহযোগী ছিল। তখন রাজু ঘোরতর পরেশ-বিরোধী বলে পরিচিত ছিল। একদা বামেদের কট্টর সমর্থক রাজু ভোটের কিছু দিন আগে পরেশের দিকে ঝুঁকে পড়ে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, যেখানে হামলা হয়েছে, সেই এলাকা কলকাতার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই অঞ্চলে দলের কর্মী-সমর্থকেরা পরেশের পক্ষে বিশেষ সক্রিয় ছিলেন না, এই অভিযোগ তুলে ১৯ তারিখ রাতে মন্টু সান্যাল ভবনে চড়াও হয় রাজুর লোকজন। অথচ ওই ওয়ার্ড থেকেই বেশি ভোট পেয়েছেন পরেশবাবু! তৃণমূলের আক্রান্তদের অভিযোগ, হামলার সময় পুলিশ নির্বিকার ছিল।

পুলিশের অবশ্য দাবি, ফোনে তাদের এ সব খবর জানানো হলেও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। ফলে তাদের কিছু করণীয় নেই। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা লাগাতার চললে সমস্যা বাড়বে বলেই পুলিশ মনে করছে। শাসক দলের পক্ষ থেকে নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছে তারা। পরেশ-অনুগামী এক নেতার অবশ্য দাবি, ‘‘সবই বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। তেমন কিছু হয়নি।’’

একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে উত্তর কলকাতার দর্জিপাড়া এবং সোনাগাছিতেও। দর্জিপাড়ায় তৃণমূলের এক নেতার বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে সোনাগাছির একটি ক্লাবে। ওই ক্লাবের পাশের বস্তিতে হামলায় এক মহিলা আহত হয়েছেন বলেও অভিযোগ। ওই গোলমালে শনিবার রাতে সোনাগাছি রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। ওই হামলায় শ্যামপুকুরের বিধায়ক শশী পাঁজার ‘অনুগামী’ বলে পরিচিত এক নেতার নাম জড়িয়েছে। তাঁর নামে পুলিশের খাতায় একাধিক অভিযোগও রয়েছে। তা সত্ত্বেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে।

তৃণমূল সূত্রের মতে, স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের একাংশ ভোটে দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে বিশেষ সক্রিয় ছিলেন না। তার সঙ্গে আছে পুরনো বিবাদও। তাই ফল বেরনোর পরে কারও কারও ক্ষোভ ফেটে পড়ছে এই ভাবে। দল কি ব্যবস্থা নেবে?

তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘দলনেত্রী সবই জানেন। কালীঘাটে দলের সাংসদ-বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে সতর্কও করা হয়েছে। এর পরে তিনি আবার সংগঠনে হাত দেবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement