নমাজ পড়াচ্ছেন বেনজির খান। নিজস্ব চিত্র
বাড়িতে বাড়িতে ইদের নমাজ হচ্ছে। আর সেই নমাজের পুরোভাগে অনেক ক্ষেত্রেই মুসলিম মহিলারা। কোনও কোনও বাড়িতে তাঁরাই নমাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ইদের দিনে মুসলিম মহিলাদের এক অংশের কাছে এটাই বড় প্রাপ্তি।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বাড়িতে ইদের নমাজ পড়তে আবেদন করেছিলেন প্রশাসন এবং ইমামেরা। সেই মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা বাড়িতে ইদের নমাজ পড়েছেন। আর বাড়ির মেয়েরা কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের সঙ্গে জমাত করে নমাজ পড়েছেন। সাধারণত অন্যান্য বছর ইদের নমাজ পড়ার অধিকারটুকুও থাকে না মুসলিম রমণীদের। এ নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। বীরভূমের আমোদপুরের বাসিন্দা, লেখিকা আয়েশা খাতুনের কথায়, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে ইদগায় মেয়েরা জমাত করে নমাজ পড়ি। কিন্তু আমরা একটা গ্রামের মেয়েরা এই অধিকার আদায় করলেও রাজ্যের মুসলিম মেয়েদের বেশির ভাগই ইদের নমাজ পড়ার সুযোগ পান না। উল্টে ইদের দিন ভোর থেকে বাড়ির হেঁসেল সামলাতেই ব্যস্ত থাকেন ওঁরা। কিন্তু এ বার লকডাউনের সৌজন্যে বাড়ির বেশির ভাগ মেয়েরা পুরুষদের সঙ্গে নমাজ পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। বড় প্রাপ্তি তো বটেই।’’
কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার অন্তর্গত পাইকান গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় স্কুলশিক্ষক ফিরোজ আহমেদ সোমবার ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘আমার স্ত্রীর নেতৃত্বে (সব থেকে যোগ্য বলেই নেতৃত্ব দিয়েছেন) সপরিবার ইদের নমাজ আদায় করলাম। ইসলাম নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান দিতে বলে। আমরা চেষ্টা করলাম।’’ ফিরোজের স্ত্রী, স্কুলশিক্ষিকা বেনজির খানের কথায়, ‘‘ইদের নমাজ আমাদের কোনও বছরেই পড়া হয় না। লকডাউন সেই সুযোগ করে দিল। আমার শ্বশুরমশাই আমাকে নমাজের নেতৃত্ব দিতে বলেন। ইদের দিনটা সারা জীবন মনে থাকবে।’’ গড়িয়ার বাসিন্দা মুজতবা আল মামুনের স্ত্রী মাকসুদা খাতুনের কথায়, ‘‘আমাদের যৌথ পরিবার। বাড়ির ছাদে প্রায় ১৫ জন পুরুষ-নারী মিলে নমাজ পড়লাম। অন্য রকম অনুভূতি।’’
অধ্যাপিকা মীরাতুন নাহার বলেন, ‘‘ইসলাম নারী-পুরুষকে সমানাধিকার দিয়েছে। সমাজ সেটা কেড়ে নিয়েছে। পরিস্থিতির কারণে যে বাধ্যতাবোধে ইদের দিনে ঘরে ঘরে নারী-পুরুষ একসাথে নমাজ পড়েছেন, তা সদর্থক।’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ওসমান গনি বলেন, ‘‘কোরানে মুসলিম মহিলাদের সম্মান দেওয়ার কথা বলা আছে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থাই মুসলিম নারীদের পর্দানসীন করে রাখত। এখন পরিস্থিতির চাপেই সবাই একসাথে ইদের নমাজ পড়লেন।’’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইসারত আলি মোল্লা বলেন, ‘‘এক শ্রেণীর ধর্মীয় গোঁড়ামির জন্যই মুসলিম মেয়েরা ইদের নমাজের সুযোগ পান না। মুসলিম মেয়েরা যত বেশি এই সুযোগ পাবেন, সমাজ তত বেশি সমৃদ্ধ হবে।’’ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতাত্ত্বিক অভিজিৎ কুণ্ডুর পর্যবেক্ষণ, ‘‘ধর্মাচরণে মুসলিম মহিলাদের অগ্রণী ভূমিকায় সমাজেরই মঙ্গল। এতে ধর্মান্ধতা কমবে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে হানাহানিও থামবে।’’
আরও পড়ুন: আইএলও-র বার্তা