ফাইল চিত্র।
নবগঠিত বিধানসভার কমিটি বণ্টন নিয়ে ফের টানাপড়েন শাসক ও বিরোধী শিবিরে। বিধানসভা সূত্রের ইঙ্গিত, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি)-সহ ১০টি কমিটির চেয়ারম্যান পদ বিরোধী দল বিজেপিকে ছাড়তে রাজি সরকার পক্ষ। কিন্তু অতীতের দৃষ্টান্ত দেখিয়ে গেরুয়া শিবির চাইছে অন্তত ১৪টি কমিটি। সরকার ও বিরোধী পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে শেষ পর্যন্ত স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ই রীতি মেনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
কমিটির নেতৃত্ব পাওয়ার পাশাপাশিই বিজেপি শিবিরে এখন চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে পিএসি-র চেয়ারম্যানের পদ। বিধানসভার প্রথা মেনে পিএসি-র চেয়ারম্যানের আলাদা মর্যাদা এবং দফতর থাকে। বিগত দু’টি বিধানসভায় বিরোধী দলনেতারা পিএসি-র পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন দলের অন্য বিধায়ককে। বিজেপি নেতৃত্বও চাইছেন, শুভেন্দু অধিকারী বিরোধী দলনেতা হয়ে যাওয়ার পরে অন্য কাউকে পিএসি-র দায়িত্ব দেওয়া হোক। কিন্তু সেখানেও রয়েছে সঙ্কট। দল জিতে সরকার গড়লে অর্থমন্ত্রী করা হবে, এই ভাবনা থেকে বিজেপি প্রার্থী করেছিল অশোক লাহিড়ীকে। তিনি বিধায়ক হলেও বিধানসভার এই কমিটির দায়িত্ব নিতে খুব আগ্রহী নন বলেই দলীয় সূত্রের খবর। এমতাবস্থায় বিজেপির হাতে তেমন ‘ওজনদার’ কোনও নাম নেই। তাই আলোচনায় ফের উঠে আসছে মুকুল রায়ের নাম। যদিও তিনি নতুন করে কোনও পদ নিতে আর উৎসাহ দেখাননি। শেষ পর্যন্ত মুকুলবাবুকেই পিএসি-র চেয়ারম্যান হিসেবে বেছে নেওয়া হলে পরিষদীয় রাজনীতিতে বিজেপির দুই মুখই হবেন অন্য দল থেকে নিয়ে আসা!
এরই পাশাপাশি বিজেপি শিবিরে অন্য একটি চর্চাও চলছে। পাঁচ বছর আগে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সুপারিশকে গুরুত্ব না দিয়ে স্পিকার তাঁর ক্ষমতাবলে পিএসি-র চেয়ারম্যান মনোনীত করেছিলেন মানস ভুঁইয়াকে। যার জেরে কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে মানসবাবুর প্রবল সংঘাত বাধে এবং পরে তিনি তৃণমূলেই যোগ দেন। মুকুলবাবুর প্রতি তৃণমূলের মনোভাব এখন যে রকম ‘নরম’, তাতে তাঁকে পিএসি-র দায়িত্বে বিধানসভাই বসিয়ে দেবে কি না, সেই ভাবনা ঘুরছে বিজেপির পরিষদীয় দলে! বিড়ম্বনা এড়াতে সে ক্ষেত্রে বিজেপিকেই আগে মুকুলবাবুর নাম সুপারিশ করে রাখতে হতে পারে। বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা অবশ্য সোমবার বলেছেন, ‘‘আমরা বসে আলোচনা করে কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’’
বিজেপির তরফে বলা হচ্ছে, বিধানসভার মোট ৪১টি কমিটির মধ্যে অতীতে বাম ও কংগ্রেস মিলে বিরোধী পক্ষের হাতে ১৪-১৫টি কমিটি ছিল। তা হলে বিজেপির ঘরে ৭৫ জন বিধায়ক থাকা সত্ত্বেও কমিটি কমিয়ে দেওয়া হবে কেন? যদিও সরকার পক্ষের যুক্তি, বাম আমলে বিরোধী তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে এবং তৃণমূলের জমানায় আগে বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে কমিটি ভাগ করতে হত। তাই সব মিলিয়ে সংখ্যায় কিছু কমিটি বেশি হত তাদের। কিন্তু এখন যেখানে একটাই বিরোধী দল, তাদের হাতে আর কত কমিটি দেওয়া হবে? পরিষদীয় দফতর সূত্রের বক্তব্য, আলোচনা সাপেক্ষেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।