মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জগদীপ ধনখড়। ফাইল চিত্র।
দিল্লি থেকে ফিরে আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘ট্যাগ’ করে টুইট বন্ধ রেখেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সাম্প্রতিক কালে তাঁর এমন ‘ধরে খেলা’ দেখেননি রাজ্যবাসী। কারণ, দায়িত্বে আসার পর থেকেই মমতা এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে চালিয়ে খেলেছেন রাজভবনের বাসিন্দা। এই সেদিন পর্যন্তও। কিন্তু দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসার পর থেকেই ধনখড় মমতা নিয়ে নীরব। যদিও অমিতের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে রাজ্যপাল রাজ্য প্রশাসনের একাংশের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন। কিন্তু তার পর থেকে তাঁর হিরন্ময় নীরবতা দেখে রাজ্য রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, এখন কি তবে শান্তিপথে ধনখড়? আপাতত?
স্বভাবতই এর কোনও জবাব কোনও তরফে মেলেনি। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ বলছে, ৬ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী রাজভবনে গিয়েছিলেন। রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রীর প্রায় ১ ঘণ্টা বৈঠক হয়। তার পরদিন, ৭ জানুয়ারি বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছিল পুরুলিয়ার একটি সরকারি হোমে নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রতিকার চাইতে। সেই ঘটনা সম্পর্কে ‘গুরুতর উদ্বেগ’ প্রকাশ করে টুইট করেছিলেন ধনখড়। তাতে তিনি মমতাকে ‘ট্যাগ’ করেছিলেন। ৮ জানুয়ারি ধনখড় টুইট করেন কল্যাণীতে ‘বঙ্গ সংস্কৃতি উৎসব’-এর উদ্বোধন নিয়ে।
তার পরদিনই, ৯ জানুয়ারি, শনিবার দিল্লি গিয়ে অমিতের সঙ্গে দেখা করেন ধনখড়। তার আগে অবশ্য তিনি বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষের বাড়িতে গিয়ে একদফা বিতর্ক তৈরি করেন। অমিতের সঙ্গে দেখা করার পরেও ধনখড় টুইট করেন। সেখানে তিনি লিকেছিলেন, রাজ্যের বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে অমিত শাহের সঙ্গে তাঁর এক ঘণ্টারও বেশি আলোচনা হয়েছে। উদ্বেগের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সেই টুইটটিতেও মমতাকে ‘ট্যাগ’ করেছিলেন ধনখড়। অমিতের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে গণমাধ্যমের সামনেও রাজ্য সরকার এবং বাংলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন রাজ্যপাল।
আরও পড়ুন: তৃণমূলে আসতে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ৭ সাংসদ, দাবি জ্যোতিপ্রিয়র
কিন্তু তার পর থেকেই তিনি টুইটে নীরব। ১০ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বা মুখ্যমন্ত্রীকে পুলিশের ‘রাজনীতিকরণ’ নিয়ে একটিও টুইট করেননি ধনখড়। তাঁর এই ‘নীরবতা’ নিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে আলোচনা এবং জল্পনা শুরু হয়েছে। বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল বৈঠকের পরেই রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ায় এমন জল্পনা শুরু হয়েছিল যে, তিনি কি আসলে কোনও ‘বার্তা’ নিয়ে যাচ্ছেন? যদিও রাজভবন এবং নবান্ন— উভয় তরফেই সেই জল্পনা ‘অলীক কল্পনা’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। উভয় তরফই ওই সাক্ষাৎকে ‘সৌজন্যমূলক’ বলে বর্ণনা করেছিল।
আরও পড়ুন: উত্তর ২৪ পরগনা থেকে হুগলি, জেলায় জেলায় পৌঁছচ্ছে কোভিড টিকার ডোজ
কিন্তু দিল্লি সফরের পর থেকে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে টুইটে পুরোপুরি ‘নীরবতা’ অবলম্বন করায় আবার জল্পনা ডানা মেলছে। বলা হচ্ছে, ধনখড় আপাতত শান্তির পথে চলতে চাইছেন। কিন্তু কেন, তা নিয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট জবাব কোনও তরফেই পাওয়া যায়নি। এখন দেখার, কতদিন রাজ্যপাল মমতা-বাণ ছোড়া থেকে বিরত থাকেন।
আরও পড়ুন: বিহার মডেলেই কি ভোট? বুধবার শহরে বৈঠক কমিশন কর্তার