রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
বাজেট অধিবেশনের জন্য প্রস্তুত করা রাজ্যপালের প্রারম্ভিক ভাষণ রাজ্য মন্ত্রিসভা অনুমোদন করলেও তাতে নিজের বক্তব্য জুড়তে চান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বুধবার রাজ্যপাল জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর নিজের কিছু বলার থাকলে, ওই ভাষণে তা তিনি যুক্ত করতে পারেন। পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, এ সব নিয়েই এ বার রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সংঘাত আরও জোরদার হতে পারে। তবে সংবিধান সম্পর্কে অভিজ্ঞ অনেকের মতেই মন্ত্রিসভার তৈরি করে দেওয়া বক্তৃতার বাইরে রাজ্যপাল যেতে পারেন না।
সূত্রের খবর, সোমবার রাজ্যপালের জন্য প্রস্তুত ভাষণ পাশ করে মন্ত্রিসভা। তার পরে মঙ্গলবার রাজ্যপালের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিনই সন্ধ্যায় ভাষণের ‘অনুমোদিত’ খসড়া নিয়ে রাজভবনে যান মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। ঘন্টা দু’য়েকের সেই আলোচনায় রাজ্যপাল ভাষণে লেখা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা, নারী সুরক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত নানা বিষয় এবং আচার্যের অধিকারের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের আপত্তির কথা জানান। এর পরেই বুধবার ধনখড় প্রকাশ্যে বলেন, ‘‘মন্ত্রিসভার তৈরি করে দেওয়া ভাষণ খতিয়ে দেখে আমার যদি আরও কিছু বলার থাকে, তা আমি বিধিসম্মত ভাবে যুক্ত করব।’’ তার পরে জল ঘোলা হতে শুরু করে।
অতীতে কখনও এমন পরিস্থিতি হয়নি। দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্টের আমলে তৎকালীন রাজ্যপাল ধর্ম বীরের জন্য তৈরি ভাষণে মন্ত্রিসভা লিখেছিল, ‘সরকার ভেঙে আমি ভুল করেছি’। তখন অজয় মুখোপাধ্যায়-জ্যোতি বসুর সরকার ভেঙে প্রফুল্ল ঘোষকে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণ করিয়েছিলেন ধর্ম বীর। সেই সরকার অবশ্য টেকেনি। অন্য দিকে ধর্ম বীর তাঁর বক্তৃতায় ওই বাক্যটি পড়েননি। তবে রাজ্যপালের লিখিত ভাষণ হিসেবে তা বিধানসভায় নথিভুক্ত হয়ে রয়েছে।
স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছেন, রাজ্যপাল লিখিত বক্তৃতার বাইয়ে কিছু বললে তা নথিভুক্ত হবে না। সংবিধান বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর মতে স্পিকারের সেই অধিকার আছে। বিধানসভায় তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতা। তাঁর আরও বক্তব্য, মন্ত্রিসভার অনুমোদিত বক্তৃতার বাইরে যাওয়ার এক্তিয়ার রাজ্যপালের নেই।
মিজোরামের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব, সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবী জয়ন্ত সুদ প্রমুখের মতেও রাজ্যপালের বক্তৃতা হল সরকারের বক্তব্য। সেখানে তিনি নিজস্ব মতামত যুক্ত করতে পারেন না। কয়েক দিন আগে কেরল বিধানসভায় সেখানকার রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান নাগরিকত্ব আইন নিয়ে রাজ্যের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত না হয়েও সেই বক্তৃতা পড়েছিলেন এবং উল্লেখ করেছিলেন, এটা তাঁর মত নয়।
অর্থবিল পেশের জন্য রাজ্যপালের অনুমোদন নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র কয়েক দিন আগে রাজভবনে রাজ্যপালকে অর্থবিল পেশ করার জন্য অনুমোদনের কথা বললে, রাজ্যপাল তাঁর কাছে বাজেট প্রস্তাবের কিছু বিষয় বিশদ জানতে চেয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রী তাঁকে বলেন, আগাম বাজেট বলার কোনও রীতি নেই। রাজ্যপাল তাতে সন্তুষ্ট নন। ফলে এই বিষয়টিও কার্যত ঝুলে রয়েছে। বিশ্বনাথবাবুর মতো সংবিধান বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ ক্ষেত্রে রাজ্যপালের পদক্ষেপ খুব ভুল নয়। কারণ, তিনি ‘আমার সরকার’ বলেন। মন্ত্রিসভা তাঁর কাছে শপথ নিয়েছে। বাজেট প্রস্তাব আগাম দেখতে চাওয়া তাঁর পক্ষে অনধিকার চর্চা বলা উচিত নয়। তবে অবশ্যই এটি রীতি বহির্ভূত।
পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘রাজ্যপাল আর কী কী করবেন সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। সব বিষয়ে সব সময়ে এত বেশি কথা বলছেন যা অতীতে হয়নি। রাষ্ট্রপতিও এত কথা বলেন না। রাজ্যপাল কি নিজেকে রাষ্ট্রপতির থেকেও বড় মনে করছেন!’’