—ফাইল চিত্র।
কার্যত বিজেপির কথারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল রাজ্যপালের গলায়।
নয়া নাগরিকত্ব আইন রাজ্যে কার্যকর হবে না বলে যে ভাবে সরকারি বিজ্ঞাপন দিয়ে ঘোষণা করছেন মুখ্যমন্ত্রী, সাংবিধানিক পদে থেকে তা করা যায় না বলে সরব হয়েছেন বিজেপির নেতা-সাংসদেরা। অশান্তি থামাতে কড়া ব্যবস্থা না নিয়ে রাজ্য সরকার ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ তোলার চেষ্টা করছে বলেও বিজেপির অভিযোগ। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের বক্তব্যও একই। মুখ্যমন্ত্রীর কাজে সাংবিধানিক প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক খোঁচাও দিয়েছেন। শাসক দল তৃণমূলের তরফে তাই রাজ্যপালকে ‘সরকারি পয়সায় দিলীপ ঘোষ’ বলে পাল্টা কটাক্ষ করা হয়েছে।
রাজভবনে রবিবার সংবাদমাধ্যমকে ডেকে রাজ্যপাল ধনখড় বলেন, ‘‘এই বিজ্ঞাপন প্রচার করা একটা অপরাধ। আইন হয়ে যাওয়ার পরেও কী করে সরকারি অর্থ ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী? এটা মেনে নেওয়া যায় না। প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত। এটা সংবিধান বিরোধী। সাধারণ মানুষের টাকা অপচয় হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: আমডাঙায় অবরোধের রাস্তাতেই রান্না হল খিচুড়ি, খেলেন পুলিশ থেকে আটকে পড়া চালকও
একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে রাজ্যপালের আবেদন, বিভিন্ন জায়গায় যে সব ঘটনা ঘটছে, তার ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ না তুলে প্রশাসনিক ভাবে মোকাবিলা করতে হবে। নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে আজ, সোমবার পথে নেমে মিছিল করার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। তার আগের দিন রাজ্যপালের ‘পরামর্শ’— ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আপনার দলের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন রকম বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত করুন। তাঁদের কাজ করতে বলুন!’’
রাজ্যের পরিস্থিতি ‘গভীর উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করে রাজ্যপাল এ দিন বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ-প্রশাসনকে আরও ভাল ভাবে কাজ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী যদি মনে করেন কারও সাহায্য দরকার, তিনি সেটা বলতেই পারেন। সংবিধানে তাঁর সহায়তা চাওয়ার সুযোগ আছে।’’ পরিস্থিতি সম্পর্কে ‘ওয়াকিবহাল’ হতে আজ রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং ডিজি-কে ডেকেও পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল।
রাজ্যপালের ভূমিকাকে পাল্টা আক্রমণই করেছে তৃণমূল। দলের মহাসচিব ও রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘উনি যে ভাবে বিজেপির কাজ করছেন, দিলীপ ঘোষের আর দরকার কী! সরকারি পয়সায় নতুন দিলীপ ঘোষ পাওয়া গিয়েছে!’’ পার্থবাবুর অভিযোগ, ‘‘সব বিষয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মন্তব্য করা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন রাজ্যপাল। তিনি বিবৃতি দিতে যাচ্ছেন কেন?’’ রাজ্যপাল যদিও ফের দাবি করেছেন, ‘‘আমি সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছি না। এই ধরনের বিবৃতি আমাকে খুব দুঃখ দিয়েছে।’’
সংসদে পাশ এবং রাষ্ট্রপতির সম্মতির ভিত্তিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) আইনে পরিণত হওয়ার পরে সাংবিধানিক সংস্থান মেনে কোনও মুখ্যমন্ত্রী সরকারি ভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে তার বিরোধিতা করতে পারেন না— এই দাবি সামনে নিয়ে আসেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত। কলকাতা প্রেস ক্লাবে এ দিন স্বপনবাবুরা আরও অভিযোগ করেন, তৃণমূলই পিছন থেকে মদত দিয়ে হিংসাত্মক কার্যকলাপ ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করেছে। রাজ্যপালের কাছে গিয়েও একই অভিযোগ জানান দিলীপবাবুরা। বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ওই বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে আইনি পথেও তাঁরা যাবেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে স্বপনবাবুর আবেদন, নতুন আইন নিয়ে নানা বিভ্রান্তির সুযোগ নিচ্ছে নানা মহল। ওই আইনের ফলে কী হল আর কী হল না, সে সব স্পষ্ট করে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বরং বিজ্ঞাপন দেওয়া হোক। স্বপনবাবুর দাবি, শীঘ্রই ওই বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘আশ্বস্ত’ করেছেন।
এমতাবস্থায় বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব রাজ্যপাল-রাজ্য সরকার তরজা বন্ধের দাবি তুলেছে। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘দেশের সামনে সঙ্কট। মানুষ বিপদে পড়েছেন। এখন রাজ্যপাল আর রাজ্য সরকার কী বলল, সেই বিতর্কে সময় নষ্ট করা যায় না।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীরও মত, ‘‘রাজ্যপাল আর মুখ্যমন্ত্রীর তরজার সময় এটা নয়। তবে সরকারি টাকায় শাসক দলের কাজ দেখতে বাংলার মানুষ অভ্যস্ত!’’