চলতি বিতর্কে আপাতত ইতি। —ফাইল চিত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্মের উপরে নিয়ন্ত্রণ ঘিরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে চলতি বিতর্কে আপাতত ইতি টানলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বুধবার ফোনে কথা হয়েছে রাজ্যপালের। তার আগে মঙ্গলবার রাতেই শিক্ষা দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিয়েছিল, সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি মোতাবেক সহ-উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের কোনও আলাদা ক্ষমতা নেই। তার পরে কার্যত রাজ্যপালের সামনে আর কোনও পথ খোলা ছিল না বলেই তিনি এ দিন সুর নরম করেছেন বলে মনে করছে প্রশাসনিক শিবির। রাজ্যপাল চলতি বিবাদকে ‘ক্লোজড চ্যাপ্টার’ বলে দেওয়ার পরে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও আর এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্য নিয়োগ ঘিরেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু রাজভবনে এ দিন ধনখড় বলেন, ‘‘কোভিড এবং আমপান-জনিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এখন শিক্ষা ক্ষেত্রে এমন বিতর্কের সময় নয়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমি খুবই ইতিবাচক বার্তা পেয়েছি। আমি আত্মবিশ্বাসী, এমন বিতর্ক যাতে আবার না মাথাচাড়া না দেয়, তার জন্য একটা পথ মুখ্যমন্ত্রী বার করবেন। তাঁর অঙ্গীকারের উপরে ভরসা রাখছি।’’ রাজ্যপালের সংযোজন, ‘‘এই দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়ে আমি ইতি টেনে দিচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত বিতর্ককে বোতলবন্দি করে দিয়েছি।’’
রাজ্যপালকে প্রশ্ন করা হয়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্য নিয়োগের জন্য তাঁর তরফে নির্দেশ কি তিনি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন? ধনখড় বলেন, ‘‘যে ক্ষতের উপরে ব্যান্ডেজ করে ফেলা হয়েছে, তাকে আর খোঁচাতে চাই না। মুখ্যমন্ত্রীর বিবেচনার উপরেই গোটা বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছি। আমরা দু’জনেই একমত যে, আমাদের কোনও মতবিরোধের আঁচ যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে না পড়ে।’’ শিক্ষামন্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে এ দিন রাজ্যপালের মন্তব্য, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সজ্জন মানুষ। আমার ভাল বন্ধুও। মন্ত্রিসভার তরফে রাজভবনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এই নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’’ এই বিষয়ে পার্থবাবুও মন্তব্য করতে চাননি।
এরই মধ্যে উপাচার্য পরিষদের সম্পাদক সুবীরেশ ভট্টাচার্য এ দিন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিমাই সাহা এবং পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য দেবকুমার মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মঙ্গলবার রাজ্যপাল ফোনে কথা বলেন। দুই উপাচার্যকে রাজ্যপাল ‘অপদস্থ’ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে বিবৃতিতে। উপাচার্য পরিষদের মতে, কঠিন পরিস্থিতিতে এখন এক হয়ে চলার সময়। অন্য দিকে, যাদবপুর, কলকাতা ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির তরেফে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, রাজভবন আর নবান্নের বৈরিতার মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী এক শিক্ষককে ‘বিজেপির লোক’ বলেছেন। যা খুবই ‘অপমানজনক’। তিন শিক্ষক সমিতির বক্তব্য, রাজভবন ও নবান্নের মাঝে পড়ে বারবার অপমানের শিকার হতে হচ্ছে শিক্ষকদের।
আরও পড়ুন: পুরসভার কাজ চালাবেন ফিরহাদ হাকিমরাই, শীর্ষ আদালতে জয় নবান্নের
আরও পড়ুন: সেই বুধবার! শেষ পর্যন্ত রক্ষে, কলকাতার মতো তাণ্ডবে পড়তে হল না মুম্বইকে