রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
জয়নগরের খুন এবং তার পরে অগ্নিসংযোগ ও তাণ্ডবের ঘটনায় রাজ্য প্রশাসনকে কড়া বার্তা দিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। রাজ্য প্রশাসন তথা শাসক দলকে নিশানা অব্যাহত রাখল বিরোধীরাও। শাসক তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য রাজ্যপালের বক্তব্যকে ‘অনধিকার চর্চা’ বলেই আখ্যা দিচ্ছে।
রাজ্যপাল বোস বুধবার বলেছেন, ‘‘শুধু আইনি পদক্ষেপই নয়, সামাজিক ভাবেই এই সব ঘটনা প্রতিরোধ করতে হবে।’’ হিংসা বন্ধে তিনিও সক্রিয় হবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল। তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করের খুনের ঘটনা ঘিরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে গত কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা চলছে। খুনের পরে সিপিএম সমর্থক-অধ্যুষিত গ্রাম দলুয়াখাকির বেশ কিছু বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগানো হয়েছে। ঘরছাড়া গ্রামের বেশ কিছু মহিলা ও শিশু। এই নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোরের মধ্যে এ দিন রাজ্যপালের বক্তব্য, ‘‘হিংসার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। আইন আইনের মতো চলবে। রাজভবনও তার দায়িত্ব পালন করবে।’’ সেই সঙ্গেই এ রাজ্যের কিছু জায়গায় হিংসা ও অপরাধের প্রবণতা বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ প্রয়োজন বলেও সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
শাসক তৃণমূল অবশ্য রাজ্যপালের এই সক্রিয়তাকে ‘অনধিকার চর্চা’ বলে মনে করছে। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘রাজভবন আগে বিধানসভায় পাশ হয়ে যাওয়া বিলগুলি ছাড়ার দায়িত্ব পালন করুক। সুপ্রিম কোর্ট সেই নির্দেশ দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি রাজ্য সরকারের উপরে ছেড়ে দিন!’’
জয়নগরে পিটিয়ে মারা, ঘর জ্বালানোর ঘটনায় কেন সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, এ দিন সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিষ মদে মারা গেলে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ। তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে মারা গেলেও ক্ষতিপূরণ। জয়নগরে পিটিয়ে মেরে দেওয়া হল, ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হল, কেন ক্ষতিপূরণ নয়? উল্টে বামেদের বাধা দেওয়া হল।’’ দলুয়াখাকি গ্রামে মঙ্গলবার ঘরছাড়াদের সঙ্গে নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করতে গিয়ে মঙ্গলবার পুলিশের বাধার মুখে পড়েছিলেন কান্তি-সহ সিপিএম নেতারা। ধস্তাধস্তিতে পায়ে চোট লেগেছিল কান্তির। আঘাত পরীক্ষার পরে দেখা গিয়েছে, বর্ষীয়ান নেতার পায়ের হাড়ে চিড় হয়েছে।
ঘর-বাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে সরব হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। বহরমপুরে তিনি এ দিন বলেন, ‘‘আপনার আমাকে খারাপ লাগতে পারে। কিন্তু আমার ঘর-বাড়ি পোড়ানোর অধিকার নেই আপনার। এ যেন উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের প্রতিরূপ দেখছি! এ বাংলায় ভাল না লাগলে বুলডোজ়ার চালিয়ে দাও, ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দাও। যারা আগুন লাগিয়েছে তারা অপরাধ করেছে, তারা প্রত্যেকে অপরাধী। তাদের ধরা হচ্ছে না কেন?’’ অধীরের আরও মন্তব্য, ‘‘যখন সংসদের এথিক্স কমিটি মহুয়া মৈত্রকে সাজা দেওয়ার কথা ভাবছে, তখন তৃণমূলের সাংসদ বলছেন ক্যাঙ্গারু আদালত। যারা নিজেরা বিচার করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, তথ্য-প্রমাণ ছাড়া যা খুশি, তা-ই করে, সেটাই ক্যাঙ্গারু আদালত। পশ্চিমবঙ্গে তো ক্যাঙ্গারু আদালতই চলছে!’’