হাসপাতালে সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে রাজ্যপাল আনন্দ বোস। ছবি: সংগৃহীত।
সন্দেশখালি যাওয়ার পথে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বুধবার বিকেলে সেই খবর পাওয়া মাত্রই দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে রাতে সুকান্তকে হাসপাতালে দেখতে গেলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। হাসপাতালে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও।
রাজভবন সূত্রে খবর, দিল্লি সফর কাটছাঁট করে রাজ্যে ফিরে এসেছেন বোস। এর পরেই রাতেই তিনি সুকান্তকে দেখতে হাসপাতালে চলে যান। বিজেপি নেতার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন। সুকান্তের কেবিনে থাকা দলের সতীর্থদের সঙ্গেও কথা বলেন রাজ্যপাল বোস।
টাকিতে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সুকান্ত। প্রথমে তাঁকে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতায় বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। নিউরোলজি বিভাগে তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছে। সেখানেই চলছে চিকিৎসা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সুকান্তের সিটি স্ক্যান করানো হয়েছে। এমআরআই-সহ প্রয়োজনীয় আরও কিছু পরীক্ষা করা হবে। আপাতত স্থিতিশীল রয়েছেন বিজেপি নেতা।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সুকান্ত স্থিতিশীল হলেও কথা বলতে তাঁর এখনও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। শরীরে ব্যথা রয়েছে। পুলিশের গাড়ির বনেটের উপরে দাঁড়িয়েছিলেন সুকান্ত। সেখান থেকে পড়ে যান। কোলে করে তাঁকে নামানো হয় নীচে। ওই সময়েই সুকান্তের চোট লেগে থাকতে পারে। শরীরে অভ্যন্তরীণ কোনও চোট আছে কি না, পরীক্ষার পর জানা যাবে। বিজেপি নেত্রী তথা চিকিৎসক অর্চনা মজুমদার বুধবার সুকান্তের সঙ্গেই ছিলেন। তিনি জানান, অ্যাম্বুল্যান্সে এক বারের জন্যও সুকান্ত চোখ খোলেননি। স্থিতিশীল হলেও তাকানোর মতো অবস্থা ছিল না তাঁর। সুকান্তের কোমরে লেগেছে। বুকেও ব্যথা রয়েছে। গাড়িতে অক্সিজেন সাপোর্টে তাঁকে রাখা হয়েছিল। ফ্লুইড চলছিল। দলীয় সূত্রে খবর, রাতে নিউরো ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করানো হয়েছে সুকান্তকে। পেট, বুক, মাথা, ঘাড় এবং মেরুদণ্ডে সিটি স্ক্যান করা হয়েছে তাঁর। সুকান্তকে অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন চলছে। ব্যথা কমানোর ওষুধও খাওয়ানো হয়েছে। তন্দ্রাচ্ছন্ন রয়েছেন সুকান্ত।
বুধবার বসিরহাট এসপি অফিস ঘেরাও অভিযানে গিয়েছিলেন সুকান্ত। সন্দেশখালিকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে বিজেপির অভিযানের নেতৃত্ব দেন তিনি। সন্দেশখালির ঘটনায় বিজেপির সাত জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁদের মুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার রাতভর সুকান্ত ধর্না দেন। রাতে তাঁকে আটকও করা হয়েছিল। তবে কিছু ক্ষণের মধ্যেই পুলিশ সুকান্তকে ছেড়ে দেয়। তার পর বুধবার সকাল থেকে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। টাকিতে বুধবার সকালে সরস্বতী পুজো করেন সুকান্ত। সরস্বতীর প্রতিমা নিয়ে তিনি সন্দেশখালির পথে রওনা দেন। পুলিশ তাঁকে বাধা দেয়। সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে বলে সেখানে সুকান্তকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না বলে জানায় পুলিশ। এর পরেই ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পুলিশের গাড়ির বনেটের উপর তিনি উঠে পড়েন।
কিছু ক্ষণ বনেটের উপর দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখা যায় সুকান্তকে কোলে করে নামিয়ে আনছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তিনি বনেটের উপরে শুয়ে পড়েন। বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, সুকান্ত সংজ্ঞা হারিয়েছিলেন। পরে জ্ঞান ফেরে। বসিরহাট জেলা হাসপাতালে কিছু ক্ষণ অক্সিজেন সাপোর্টে ছিলেন তিনি। তার পর তাঁকে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়।