CV Ananda Bose

নবমী সন্ধ্যায় রাজভবনের ফুটপাথে রাজ্যপাল, ভবঘুরে নন্দের খাওয়া-থাকার সঙ্গে হল বাগানে কাজের ব্যবস্থাও

প্রায় আধ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দোভাষী মারফৎ কথা চালিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস জানতে পারেন, ওই ভবঘুরের নাম অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। ডাক নাম নন্দ। হাওড়ার কদমতলার বাসিন্দা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:৫১
Share:

রাজভবনের বাইরে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ভবঘুরে নন্দের সঙ্গে কথা বলে তাঁর অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের বন্দোবস্ত করলেন। —নিজস্ব চিত্র।

নিয়তি বোধহয় একেই বলে! বাড়ির লোকজনের মার খেয়ে হাওড়ার কদমতলার বাড়ি ছেড়ে কলকাতার ধর্মতলায় এসে ভরঘুরের জীবনযাপন শুরু করেছিলেন নন্দ। এ বার সেই নন্দের কপালেই ‘রাজ-যোগ’! ধর্মতলার ফুটপাতেই কেটে গিয়েছে তাঁর ১০-১২ বছর জীবন। কখনও এসপ্লানেড এলাকার দামী হোটেলের সামনের ফুটপাত, কখনও আবার মেট্রোর সিঁড়ি। কখনও আবার বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলের সামনের রাস্তায়। আবার রাজভবনের কোয়াটার্সের ছাদের তলার রাস্তাতেই কেটেছে কত শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা।

Advertisement

সেই রাজভবনের দরজা শারদোৎসবের নবমীর বিকেলে নন্দের জন্য খুলে গেল। সোমবার বিকেলে রাজভবন থেকে বেরিয়ে চিকিৎসকদের কোয়াটার্সে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজভবনের স্থায়ী চিকিৎসকদের শারদীয়ার শুভেচ্ছা জানাতেই সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। তার পরের কর্মসূচিও স্থির ছিল রাজ্যপালের। রাজভবনের পুজো প্যান্ডেলে এক বার দেবীদর্শন করে বোস যেতে চেয়েছিলেন রাজভবনের কোয়াটার্সে।

কিন্তু চিকিৎসকদের কোয়াটার্স থেকে নেমে রাজভবনের পুজো মণ্ডপের দিকে যেতেই ফুটপাতে এক ভবঘুরেকে শুয়ে থাকতে দেখেন রাজ্যপাল। পরনে ছেঁড়া-নোংরা জামা এবং হাফ প্যান্ট পড়া মাঝবয়সের ব্যক্তিকে দেখেই রাজ্যপাল তাঁর সঙ্গে থাকা আধিকারিকের কাছে জানতে চান, এই ব্যক্তি কেন এখানে শুয়ে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে যাবতীয় তথ্য জানতে চান বোস। প্রায় আধ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দোভাষী মারফত কথা চালিয়ে রাজ্যপাল জানতে পারেন, ওই ভবঘুরের নাম অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। ডাক নাম নন্দ। হাওড়ার কদমতলার বাসিন্দা। পরিবারে ঝামেলার কারণে গত ১০-১২ বছর ধরে ঘরছাড়া। এই ধর্মতলা চত্বরই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। কখনও খাওয়া জোটে, কখনও জোটে না। তাই দিনে এক বার খেতে পেলেই নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন তিনি। রাস্তায় থাকতে থাকতে একটু খামখেয়ালি গোছের মানুষ হয়ে গিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলে রাজ্যপালকে এই কথা জানান আধিকারিকেরা।

Advertisement

দোভাষী মারফত নন্দ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানার পর দোভাষী মারফতই তাঁকে রাজভবনের কোয়াটার্সে থাকার প্রস্তাব দেন রাজ্যপাল। প্রথমে রাজি না হলেও, কয়েক বারের অনুরোধে সেখানে থাকতে রাজি হন নন্দ। রাজ্যপাল দোভাষীদের মারফত তাঁকে দিনে তিন-চার বার খাবার দেওয়ার প্রস্তাব দেন। শুনে নন্দ জবাব দেন, ‘‘এখন আর অত বার খেতে পারি না। বিকেলের দিকে এক বার খাই। হুজুর এক বার খাওয়ার বন্দোবস্ত করে দিলেই হবে।’’ রাজ্যপাল দোভাষী মারফত নন্দকে জানান, কোয়াটার্সে থাকলে ঠিক মতো খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা তিনিই করে দেবেন। এ বিষয়ে তাঁকে ভাবতে হবে না। রাজ্যপাল জানতে চান, নন্দ কি কোনও কাজ করতে পারবেন? নন্দ রাজভবনের আধিকারিকদের জানান, আগে হাওড়ার একটি কারখানায় সাফাইকর্মী হিসাবে কাজ করতেন তিনি। তাই যদি সাফাইকর্মী হিসাবে তাঁকে কোনও কাজ দেওয়া হয়, তবে সেই কাজ করতে তিনি রাজি। রাজ্যপাল নির্দেশ দেন, নন্দকে যাতে আর কোনও দিন রাস্তায় শুয়ে থাকতে না দেখা যায়। তাঁকে খাওয়াদাওয়া করানো এবং কাজ দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর। তাই আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই রাজভবনের বাগানে সাফাইকর্মী হিসাবে কাজ করবেন নন্দ।

রাজ্যপালের নির্দেশ পাওয়ার পরেই রাজভবনের কর্মীরা তাঁকে রাজভবনের কোয়াটার্সে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় নন্দ বলেন, ‘‘কাকারা বাড়ি থেকে মেরে তাড়িয়ে দিয়েছিল। তাই বাড়ি কী, তা ভুলেই গেছি। এখন হুজুর যেখানে পাঠাচ্ছেন, সেখানেই থাকব। আমার আর কিছু বলার নেই।’’ রাজভবনের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছর ধরে ফুটপাতে একা একা থাকায় মানসিক সমস্যা তৈরি হয়েছে ওই ভবঘুরের। তাই অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের সঙ্গে তাঁর চিকিৎসাও প্রয়োজন। সেই দায়িত্বও এখন থেকে রাজভবনের। নন্দকে ঠাঁই দিয়ে রাজ্যপাল যান কোয়র্টাসের বাসিন্দাদের পুজোর শুভেচ্ছা জানাতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement