৩ নিগম এক করে দাওয়াই পরিবহণে

দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেই সরকারি পরিবহণের হাল ফেরানোর দিকে নতুন ভাবে নজর দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। যার অঙ্গ হিসেবে ফের শুরু হয়েছে বিবিধ পরিবহণ নিগমকে ধাপে ধাপে মিলিয়ে দেওয়ার তোড়জোড়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০২:৫৬
Share:

দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেই সরকারি পরিবহণের হাল ফেরানোর দিকে নতুন ভাবে নজর দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। যার অঙ্গ হিসেবে ফের শুরু হয়েছে বিবিধ পরিবহণ নিগমকে ধাপে ধাপে মিলিয়ে দেওয়ার তোড়জোড়। মমতা জমানায় এই উদ্যোগ আগে হলেও তাতে তেমন জোর ছিল না, ফলও সে ভাবে মেলেনি। এ বার অনেক বেশি আটঘাঁট বেঁধে মাঠে নামা হচ্ছে বলে প্রশাসনের দাবি।

Advertisement

সরকারি বাস-ট্রামের হাল-হকিকত নিয়ে সম্প্রতি রাজ্যের নয়া পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ও পরিবহণ-সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি আবার নিগম সংযুক্তির উপরে জোর দেন। সেই মতো প্রথম দফায় ট্রাম কোম্পানি, সিএসটিসি ও ভূতল পরিবহণকে এক সূত্রে গাঁথার পরিকল্পনা হচ্ছে।

এবং তার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী ওই তিন নিগমের পরিচালন বোর্ডকে মিলিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘তিনটে বোর্ড এক করে দিলাম। এতে খরচ কমবে। পরিচালনাও ভাল হবে।’’ আলাপনবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘তিন নিগমকে জোড়ার ক্ষেত্রে অভিন্ন বোর্ড গঠন প্রথম ধাপ। সংযুক্তিকরণের আইনি দিকগুলো খতিয়ে দেখে বাকি পদক্ষেপ করা হবে।’’ সচিবের দাবি, অভিন্ন বোর্ড থাকলে অযথা খরচ কমবে। একই ডিপো থেকে তিন নিগমের বাস ছাড়বে। একটা রুটে একটা নিগমেরই বাস চলবে। যাত্রী ও সংস্থা— দু’তরফেই উপকৃত হবে।

Advertisement

তিন নিগমের নতুন অভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী রচপাল সিংহ। ভাইস চেয়ারম্যান স্বর্ণকমল সাহা। সদস্য হিসেবে আছেন শাসকদলের দুই বিধায়ক— নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুজিত বসু। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, নতুন বন্দোবস্তে কারও চাকরি যাবে না। যে যা কাজ করছিলেন, তা-ই করবেন। পাশাপাশি এ দিন এনবিএসটিসি এবং এসবিএসটিসি’র নতুন বোর্ড ঘোষণা হয়েছে। দুই নিগমের চেয়ারম্যান পদে ফের এসেছেন যথাক্রমে সৌরভ চক্রবর্তী ও তমোনাশ ঘোষ। ভাইস চেয়ারম্যান যথাক্রমে অর্ঘ্য রায়প্রধান ও অসিত মজুমদার।

২০১১-য় প্রথম ক্ষমতায় এসে মমতা রুগ্‌ণ সরকারি পরিবহণকে লাভজনক করে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পাঁচটি নিগমকে এক ছাতার তলায় আনার চিন্তা-ভাবনা তখনই শুরু। তৈরি হয় মন্ত্রিগোষ্ঠীও। তারা এক পেশাদার সংস্থাকে সমীক্ষার দায়িত্ব দেয়। সমীক্ষা-রিপোর্টে অবশ্য বলা হয়, আইনি বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে নিগমগুলোকে চটজলদি মিলিয়ে দেওয়া কঠিন। আবার এক হলেই লাভের মুখ দেখবে— এমন নিশ্চয়তা নেই। উপরন্তু কেন্দ্রীয় আইনবলে গড়ে ওঠা সিএসটিসি’র সঙ্গে অন্য নিগমকে জুড়তে হলে কেন্দ্রীয় আইন বদলানো জরুরি। যা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ও জটিল কাজ বলে রিপোর্টে অভিমত প্রকাশ করা হয়।

এমতাবস্থায় সংযুক্তির আগে ‘এক রুট, এক নিগম’ নীতি চালুর করেছিল ‘জোন্স-লাং-লাসাল’ নামে উপদেষ্টা সংস্থাটি। কলকাতার তিন নিগমকে নিয়ে অভিন্ন পরিচালন বোর্ড গঠনেরও পরামর্শ দেয়। এ দিনের সিদ্ধান্তে তারই প্রতিফলন দেখছে পরিবহণ দফতর। উদ্যোগের সাফল্য সম্পর্কে অবশ্য কিছুটা সংশয়ও রয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। কেন?

নবান্ন সূত্রের খবর: মহানগরে ‘এক রুট, এক নিগম’ নীতি আগেই চালু হয়েছে। একটা রুটে একটা নিগমেরই বাস চলছে। আর বছর দুই আগে কলকাতার তিন নিগমকে নিয়ে অভিন্ন বোর্ড গড়া হয়েছিল, যার চেয়ারম্যান ছিলেন তদানীন্তন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। ভোটের আগে নিয়ম মেনে তা ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু তিন বোর্ড মিলিয়ে দিয়েও কোনও নিগমকে লাভের মুখ দেখানো যায়নি। ‘‘কার্যত একই ঢঙে নতুন বোর্ড করা হল। দেখা যাক, কী হয়।’’— মন্তব্য সূত্রটির।

বস্তুত নিগমগুলোর আর্থিক দুর্দশার চিত্র সরকারি তথ্যেই পরিষ্কার। তাদের পিছনে ভর্তুকি বাবদ রাজ্যের কোষাগার থেকে ফি বছর পাঁচশো কোটি টাকা গলে যাচ্ছে। স্বেচ্ছাবসর দিয়ে বা ডিপোর বাড়তি জমি বেচেও ভর্তুকিতে রাশ টানা যায়নি। বরং তা বহরে বেড়েছে।

তবে নতুন পর্যায়ে সংযুক্তিকরণের ‘সাফল্য’ সম্পর্কে আশার বাণীও মজুত প্রশাসনের অন্য অংশে। এই মহলের দাবি, গত পাঁচ বছরে মুনাফা না-করলেও নিগমগুলোর কাজকর্মে উন্নতি হয়েছে। তারা সাধ্য মতো আয় বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। দু’দফার স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে কর্মীর ভারও খানিক কমানো গিয়েছে। এতে খরচের বোঝা কিছুটা হাল্কা হয়েছে।

এ হেন ‘পরিবর্তিত’ প্রেক্ষাপটে সব নিগমকে ধাপে ধাপে এক ছাতার তলায় আনতে পারলে অচিরে মুনাফার দেখা মিলবে বলে আশাবাদী কর্তাদের অনেকেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement