পুরুলিয়া থেকে দার্জিলিং-ডুয়ার্সে সস্ত্রীক বেড়াতে গিয়ে ‘দালাল’-এর পাল্লায় পড়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সৌম্যেন্দ্রশেখর মাহাতো। ২০ হাজার টাকা খুইয়ে নমো-নমো করে ঘুরে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল। কলকাতার হাতিবাগান থেকে বিপ্লব ভট্টাচার্য এনজেপি নেমে গাড়ি-হোটেলের জন্য আগাম টাকা দিয়ে গ্যাংটকে পৌঁছে দেখেছিলেন কোনও ‘বুকিং’ নেই। এনজেপি থানার পুলিশের সাহায্যে টাকা ফেরত পেলেও বেড়ানো মাথায় উঠেছিল তাঁদের। এমন নানা ঘটনার কথা মাথায় রেখেই পর্যটকদের হয়রানি রুখে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে ‘ট্যুরিস্ট গাইড’ কোর্স চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার।
সরকারি সূত্রের খবর, শিক্ষা ও পর্যটন দফতর মিলে ওই কোর্স চালুর কথা ভাবছে। পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘ট্রাভেল-ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্টের কিছু কোর্স নানা জায়গায় চালু রয়েছে। মেদিনীপুরের কলেজেও ট্রাভেল ফোটোগ্রাফি কোর্সে আমরা সহায়তা করছি। ট্যুরিস্ট গাইড কোর্স চালুর জন্যও চিন্তাভাবনা করছে সরকার।’’ ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রবিবার উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্যে পর্যটনের প্রসার হয়েছে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়ছে। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার অনুমোদিত কোর্স সম্পূর্ণ করে কেউ গাইড হলে দ্রুত কাজের সুযোগ পাবে। চাকরি না করেও স্বনির্ভর হওয়াও সহজ হবে। আমরা গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখছি।’’
বস্তুত, রাজ্যে ট্যুরিস্ট গাইড তৈরির জন্য অন্তত ১০ মাসের সার্টিফিকেট কোর্স চালুর দাবি অনেক দিন ধরেই রয়েছে। ডুয়ার্সের জয়ন্তীর ট্যুরিস্ট গাইডদের সংগঠনের মুখপাত্র
শেখর ভট্টাচার্য নানা সময়ে বিষয়টি নিয়ে সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। শেখরবাবু বলেন, ‘‘অযোধ্যা পাহাড় থেকে নেওড়াভ্যালি কিংবা বক্সার জঙ্গল, সব জায়গায় ঘোরাফেরার সময়ে গাইড থাকলে অনেক কাজই সহজ হয়ে যায়। সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত।’’ ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যালও মনে করেন, ঠিকঠাক সিলেবাস তৈরি করে প্রশিক্ষণ দিয়ে গাইড তৈরি করলে নতুন একটা কাজের দুনিয়া রাজ্যের ছেলেমেয়েদের সামনে খুলে যাবে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রশিক্ষণ ও সিলেবাস
তৈরির কাজে সব রকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’’
একটা সময়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম, হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট কোর্স চালু থাকলেও পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সে কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকার এ বার ১০ মাসের সার্টিফিকেট কোর্স চালুর কথা ভাবছে। ওই কোর্স সফল ভাবে সম্পূর্ণ করলে প্রশিক্ষিত গাইডদের তালিকা তৈরি করে দফতরের ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। পর্যটকেরা সেখানে যোগাযোগ করে পছন্দ সই গাইড বেছে নিতে পারবেন।