সহিষ্ণুতার ফিল্মোৎসবে ডাক অন্য শিবিরকেও

দেশজোড়া অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ বিজেপিকে কী ভাবে কোণঠাসা করেছে, তিনি দেখেছেন। রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে এ বার নড়েচড়ে বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কলকাতায় আসন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে মমতার সরকার সহিষ্ণু মুখ তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর। তাই এত দিন যাঁরা ব্রাত্য ছিলেন, সেই সব শিল্পী-কলাকুশলীকে এ বার বিশেষ ভাবে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:১৭
Share:

চলচ্চিত্র উৎসবের সাংবাদিক বৈঠক। উপস্থিত ছিলেন (বাঁ দিক থেকে) অত্রি ভট্টাচার্য, অরিন্দম শীল, রঞ্জিৎ মল্লিক, মুনমুন সেন ও হরনাথ চক্রবর্তী।

দেশজোড়া অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ বিজেপিকে কী ভাবে কোণঠাসা করেছে, তিনি দেখেছেন। রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে এ বার নড়েচড়ে বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কলকাতায় আসন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে মমতার সরকার সহিষ্ণু মুখ তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর। তাই এত দিন যাঁরা ব্রাত্য ছিলেন, সেই সব শিল্পী-কলাকুশলীকে এ বার বিশেষ ভাবে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।

Advertisement

বিহার ভোটের মধ্যিখানেই নীতীশ কুমারকে সমর্থন জানিয়ে রেখেছিলেন মমতা। বিহারে বিজেপি ধরাশায়ী হওয়ার পরেই অসহিষ্ণুতা-বিরোধী বার্তাও দিয়েছেন। এ রাজ্যে কিন্তু তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, অম্বিকেশ মহাপাত্র-শিলাদিত্য চৌধুরীদের হেনস্থা করা রাজ্য সরকারের মুখে সহিষ্ণুতার কথা শোভা পায় না। সেই সমালোচনার জবাব দিতে তৈরি রাজ্য সরকার।

কী রকম? মৃণাল সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তো বটেই! তরুণ মজুমদার, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মতো চিত্রপরিচালক, যাঁদের গত চার বছরে মমতার ধারে-কাছে দেখা যায়নি, তাঁদের এ বার ফিল্মোৎসবে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। শনিবার, ১৪ নভেম্বর চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অমিতাভ বচ্চনদের সঙ্গে টালিগঞ্জের এই বর্ষীয়ানদের থাকার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

অপর্ণা সেনকে আগে বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে ডাকা হলেও পরে তিনি নানা ঘটনায় মমতা-সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন। এ বার অপর্ণা সেনকে ডাকতে যাতে ভুল না-হয়, সে বিষয়ে তৎপর রাজ্য সরকার। একই ভাবে চিঠি পাঠিয়ে ডাকা হয়েছে নানা বিষয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সরব হওয়া অভিনেতা-নাট্য ব্যক্তিত্ব কৌশিক সেনকেও। আবার সাম্প্রতিক অতীতে বিজেপি-শিবিরভুক্ত হয়েছেন যে অভিনেতারা, তাঁরাও বাদ যাননি। রূপা গঙ্গোপাধ্যায় বা লকেট চট্টোপাধ্যায়রা আমন্ত্রণ পেয়েছেন উৎসবে। এ রাজ্যের আমরা-ওরা সংস্কৃতিতে ব্যাপারটা আলাদা করে প্রণিধানযোগ্য বলেই মনে করা হচ্ছে।

গত ক’বছরের উদাসীনতা ভেঙে হঠাৎ এই তৎপরতার কারণ? রাজ্যের আমলা মহলেও ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্নটা। গত দু’-তিন বছর চলচ্চিত্র উৎসবের সময় যাঁদের কথা মনে পড়েনি রাজ্য সরকারের, এ বার তাঁদের ডাকার জন্য এত উৎসাহ কেন? প্রশাসনের অন্দরে অনেকেরই মত হল, এর নেপথ্যে প্রকৃত কারণ সেই বিহার। দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে বিহার ভোট এবং সেখানে বিজেপি-র ‘শিক্ষা’লাভ থেকে শিক্ষা নিয়েই নিজের ভাবমূর্তি পাল্টাতে উঠে-পড়ে লেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবেই চলচ্চিত্র উৎসবে সংস্কৃতি ও বিনোদন জগতের তথাকথিত শাসক-বিরোধী মুখগুলিকে ডাকা়ডাকির হিড়িক। ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম চলচ্চিত্র উৎসবে ঘোষিত বাম-অনুগামী তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, মৃণাল সেনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। পরবর্তী কালে বর্ষীয়ান দুই ব্যক্তিত্বই মমতা-সংস্রব এড়িয়ে যান। চলচ্চিত্র উৎসবের আমন্ত্রিতের তালিকায় তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করার সৌজন্যও উবে যায় তখনই। এ ছাড়া বাম-ঘনিষ্ঠ বা কোনও না-কোনও কারণে শাসক দলের সঙ্গে দুরত্ব তৈরি হওয়া শিল্পী-পরিচালকদের অনেককেই ডাকা হয়নি, গত দু’-তিন বছরে।

আমলা মহলের অনেকের ব্যাখ্যা, কয়েক মাস বাদে রাজ্যে বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে সহিষ্ণুতাই মমতার কৌশল। শিলাদিত্য চৌধুরী বা অম্বিকেশ মহাপাত্রের ঘটনায় মমতার যে ‘অসহিষ্ণু’ চেহারা প্রকাশ পেয়েছিল, এত দিনে সেটা পাল্টানোর কথা তিনি ভাবছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী কত দূর সফল হন, সেটা নির্ভর করছে আমন্ত্রিতরা কতটা সাড়া দেন, তার উপরে। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘সিনেমা নিয়ে মান-অভিমান রাখতে চাই না। আসার ইচ্ছা থাকছে।’’ বুধবার সরকারি তরফে চিঠি পৌঁছেছে পরিচালক তরুণ মজুমদারের কাছে। সই করে চিঠি নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘বিষয়টা নিয়ে এখনও ভাবিনি। দেখি কী করি!’’ তৃণমূল-শিবির ছেড়ে বিজেপিতে আসা অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘যাওয়ার চেষ্টা করব!’’

ফলে বিশেষ অতিথিরা আসবেন ধরে নিয়েই তৈরি হচ্ছে সরকার। উৎসবকে আরও জনমুখী এবং জনপ্রিয় করে তুলতে ফেসবুক, টুইটারকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজ্যের তথ্য-সংস্কৃতি সচিব অত্রি ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘চলচ্চিত্র উৎসবকে সবার উৎসব করে তুলতে চাইছি। নানা ভাবে প্রচার করে, চেষ্টা করছি আরও বেশি লোক যাতে উৎসবে সামিল হন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement