প্রতীকী ছবি।
সরকারি ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত জানুয়ারিতেই বেতন বাড়ছে কি না, তা নিয়ে সংশয় দানা বেঁধেছে কর্মীদের একাংশের মধ্যে। সম্প্রতি অর্থ দফতরের একটি আদেশনামা ঘিরে এই বিষয়ে জল্পনা চরমে উঠেছে কর্মী মহলে।
ওই আদেশনামায় অর্থ দফতর নতুন বেতনক্রম নেওয়ার ‘অপশন ফর্ম’ পূরণের শেষ দিন ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি করেছে। তাতেই বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে কর্মী শিবিরে। কর্মীদের প্রশ্ন, যদি পছন্দের বেতনক্রম নেওয়ার ‘অপশন’ দিতেই ১৫ জানুয়ারি গড়িয়ে যায়, তা হলে ১ ফেব্রুয়ারি বর্ধিত বেতন মিলবে কী করে? ১৫ দিনের মধ্যে সরকারি দফতরে হিসেবনিকেশ শেষ হবে তো? এই চর্চাই চলছে অফিসকাছারিতে।
যদিও অর্থ দফতরের কর্তারা জানিয়ে দিচ্ছেন, জানুয়ারি থেকেই বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এই নিয়ে কর্মীদের উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। ‘ইন্টিগ্রেটেড ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ বা আইএফএমএস চালু হওয়ার পরে এখন মাসের শেষ সপ্তাহে বেতনের বিল তোলা হয়। যা আগে তুলে ফেলতে হত মাসের প্রথম সপ্তাহে। সেই জন্যই ১৫ জানুয়ারির মধ্যে অপশন ফর্ম পূরণ হয়ে গেলে ফেব্রুয়ারিতে বর্ধিত বেতন দিতে কোনও সমস্যা নেই। তবে প্রতি বারেই বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত রূপায়ণের পরে কিছু ভুলভ্রান্তি নজরে আসে। পরের মাস থেকে তা ঠিক করে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: বিএলও-রা গরহাজির, জট ভোটার তালিকা সংশোধনে
নবান্নের দাবি, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ পর্যন্ত যে-সব কর্মীর কোনও পদোন্নতি হয়নি, তাঁদের অপশন ফর্ম পূরণের প্রয়োজন নেই। যাঁরা পেয়েছেন, তাঁরা সর্বশেষ পদোন্নতির সুবিধা দাবি করে নতুন বেতন চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। অনলাইনে সেই দাবির সঙ্গে সঙ্গে নতুন বেতনের হিসেব কষতে দু’তিন দিনের বেশি লাগার কথা নয়। ফলে কর্মীরা আতঙ্কিত না-হয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অপশন ফর্ম পূরণ করে ফেলুন— এমনই বার্তা দিচ্ছেন নবান্নের অর্থ দফতরের কর্তারা।
তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বায়ক সৌম্য বিশ্বাস বলেন, ‘‘সময়ে বেতন দিতে রাজ্য সরকার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রযুক্তিগত বাধা না-এলে আশা করি, সময়েই নতুন বেতন হাতে পাবেন কর্মীরা।’’ সংগঠনের মেন্টর গ্রুপের সদস্য মনোজ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘দেরি হবে বলে মনে হয় না। তবে তা যদি হয়ও, এরিয়ার পেয়ে যাবেন কর্মীরা। ১ জানুয়ারি থেকেই বর্ধিত বেতন পাবেন তাঁরা।’’
আরও পড়ুন: ‘এগিয়ে চলো, সঙ্গে আছি’, ছাত্রদের মমতা
কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্টস এমপ্লয়িজ়ের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, সাধারণ ভাবে নতুন বেতন জানুয়ারির শেষে অথবা ফেব্রুয়ারির একেবারে শুরুতে হাতে পাওয়ার কথা। কিন্তু এত বড় প্রক্রিয়া শেষ করে সরকার ঠিক সময়ে তা দিতে পারবে কি না, সন্দেহ থেকেই যায়। রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিংহ জানান, এমনিতে দেরি হওয়ার কথা নয়। তবে অনলাইন নতুন পদ্ধতিতে সব কর্মী তত সড়গড় নন। সেটা সরকারের দেখা দরকার। ‘‘আমাদের বিশ্বাস, এই পরিস্থিতিতে সরকার বর্ধিত বেতন দিতে দেরি করবে না,’’ বলেন কর্মচারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস শীল।
বকেয়া মহার্ঘ ভাতা না-দেওয়ায় এর মধ্যে রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে (স্যাট) রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়েছে। তার শুনানি ৯ জানুয়ারি। মামলাকারী সংগঠন কনফেডারেশনের নেতা মলয়বাবু জানান, বেতন কমিশনের সুপারিশ রূপায়ণের আগে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল স্যাট। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই আদেশ মানেনি। সেই জন্যই রাজ্যের বিরুদ্ধে অবমাননার মামলা করা হয়েছে। কর্মীরা বিচার চান।