এসজেডিএ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত আইএসএস অফিসার গোদালা কিরণকুমারকে নিয়ে ময়নাগুড়ির প্রস্তাবিত বৈদ্যুতিক শ্মশানঘাটের প্রকল্পস্থলে নিয়ে গেলেন সিআইডি অফিসারেরা। রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ মাটিগাড়া থানা থেকে গাড়িতে করে সোজা এসজেডিএ-র প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী অফিসারকে ময়নাগুড়ির মহাকালপাড়ার জর্দা নদীর ধারের প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মিনিট পাঁচেকও সিআইডি অফিসারেরা ধৃতকে নিয়ে সেখানে ছিলেন না। এমনকি, গোদালা কিরণকুমারকে গাড়ি থেকেও নামানো হয়নি। পরে সেখান থেকে তাঁকে ফের শিলিগুড়ির পিনটেল ভিলেজে সিআইডি-র দফতরে ফেরত নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যা অবধি কয়েক দফায় জেরার পর রাতে ফের তাঁকে মাটিগাড়া থানায় নিয়ে রাখা হয়।
আজ, সোমবার সিআইডির চারদিনের হেফাজতের পর গোদালাকে শিলিগুড়ি এসিজেএম আদালতে হাজার করানো হবে। সিআইডি সূত্রের খবর, এদিন ময়নাগুড়ির এলাকাটি দেখিয়ে গোদালাকে প্রকল্পটি সম্পর্কে জানতে চান সিআইডি অফিসারেরা। তিনি কোনও সময় সেখানে এসেছিলেন কি না। গোদালা তা না বলায়, কাজ কার্যত না হওযা প্রকল্পটিতে কিসের ভিত্তিতে তিনি ঠিকাদার সংস্থাকে কোটি কোটি টাকা পেমেন্ট করার নথিতে সই করেছিলেন তা জানাতে চাওয়া হয়। এদিনই গোদালা দাবি করেন, বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুসারে এবং বাস্তুকারদের কাগজপত্রের ভিত্তিতে তিনি কাগজে সই করেছিলেন। ওই প্রকল্পের যে কোনও কাজ হয়নি তা তিনি জানতেন না।
সিআইডির-র এক কর্তা জানান, ময়নাগুড়ির শ্মশানের মামলায় গোদালা কিরণকুমার টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তদন্তে কিছু তথ্য প্রমাণও সামনে এসেছে। এলাকাটিতে তিনি না গিয়েই কীভাবে টাকা পেমেন্ট করার নির্দেশ দিলেন তা তাঁর কাছ থেকে জানার জন্যই এদিন গোদালকে ময়নাগুড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই ময়নাগুড়ির মহাকালপাড়ায় প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যুতিক চুল্লির প্রকল্প হাতে নেয় এসজেডিএ। কাজও কিছু শুরু হয়। কিছুদিন কাজ চলার পর ঠিকাদার সংস্থাকে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা কাজের পেমেন্ট করে দেওয়া হয়। অভিযোগ, ওই টাকার কাজ আদতে না হলেও কাগজপত্রে কাজ হয়েছে দেখিয়ে টাকা পেমেন্ট হয়। পরবর্তীতে টাকার একটি বড় অংশ হাওয়ালার মাধ্যমে হায়দরাবাদে পৌঁছায় বলে জানা গিয়েছে। এমনকি, তা ধৃত অফিসারের আত্মীয়দের কাছে পৌঁছেছে বলেও অভিযোগ করা হয়। যদিও ধৃত আইএএস অফিসার এদিনই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে গিয়েছেন।
সিআইডি সূত্রের খবর, ওই শ্মশানঘাটের প্রকল্পের কিছু পিলারের লোহার রড এবং জালি দাঁড় করানো হয়। পাশে গুদাম ঘরে সিমেন্ট রাখা হয়। সামনে পাকুড়ের পাথর এবং লোহার রড ফেলে রাখা হয়। এর থেকে এক চুলও বেশি কোনও নির্মাণ কাজ হয়নি। আজও প্রকল্প এলাকার সেই অবস্থাই রয়েছে। এ দিন তা দেখিয়ে কী ভাবে কোটি কোটি টাকা দেওয়া হল, তাই গোদালার কাছে বারবার জানতে জানতে চান সিআইডি অফিসারেরা। সন্ধ্যার পরেও পিনটেল ভিলেজে এনে কারও নির্দেশ তিনি ওই কাজ করেছিলেন কি না তা জানতে চাওয়া হয়। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাস্তুকারেরা সব খতিয়ে দেখে রির্পোট দেওয়ায় তিনি পেমেন্ট করেছিলেন বলে আবার দাবি করেন। পরবর্তীতে অভিযোগ ওঠায়, তিনিই দুই বাস্তুকারকে সাসপেন্ড করেছিলেন বলে তদন্তকারীদের জানান। ধৃত আইএএস অফিসারদের সমস্ত বয়ানই নথিভুক্ত করা হয়েছে।