ফেরারি-দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে ফের স্বাভাবিক জীবনে

গত বছরের ৩ জুন ডোমজুড়ের কাছে জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় পড়ে তিন কোটি টাকারও বেশি মূল্যের একটি ফেরারি গাড়ি। ওই গাড়ির চালক, কলকাতার ব্যবসায়ী শিবাজি রায়ের মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। শিবাজিবাবুর পাশের আসনে বসেছিলেন আসনা।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৯ ০২:২৭
Share:

ফেরা: জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আসনা সুরানা। ছবি: সুমন বল্লভ

দিদির জন্মদিন ৮ জুলাই। গত বছর ওই দিনটায় দিদির সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি বছর বারোর আকশত সুরানার। সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে শয্যাশায়ী দিদির তখন ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরলেও কথা বলার অবস্থা হয়নি। তবে দিদির থেকে তাঁকে বেশি দিন দূরে রাখতে পারেননি বাড়ির লোকজন। গত বছরের ২৬ অগস্ট, রাখির দিন, জেদ ধরে পোষ্য কুকুর হেজ়েলকে নিয়ে সোজা সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে হাজির হন আকশত!

Advertisement

ঠিক এক বছর পরে সেই জন্মদিনেই তাঁর জন্য ভাইয়ের ঘর সাজানোর তৎপরতার কথা বলতে গিয়ে দিদি আসনা সুরানা বললেন, ‘‘এই পাগলটা (ভাই) সব করেছে। ওই হ্যাপি বার্থডে লেখাটা, বেলুনগুলো সব অনলাইনে আনিয়েছে। এ ভাবে যে আর একটা জন্মদিন কাটাতে পারব, ভাবিনি। গত বার ১৮ বছরের জন্মদিনটা হাসপাতালে কেটেছে। আমার জন্য ভাইও এখন আর লং ড্রাইভে যাওয়ার বায়না করে না।’’

গত বছরের ৩ জুন ডোমজুড়ের কাছে জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় পড়ে তিন কোটি টাকারও বেশি মূল্যের একটি ফেরারি গাড়ি। ওই গাড়ির চালক, কলকাতার ব্যবসায়ী শিবাজি রায়ের মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। শিবাজিবাবুর পাশের আসনে বসেছিলেন আসনা। বাবা, কাকা এবং ভাইয়ের সঙ্গে লং ড্রাইভে বেরিয়েছিলেন তিনি। দুর্ঘটনা ঘটার কিছু ক্ষণ আগেই বাবার বন্ধু শিবাজিবাবুর ফেরারিতে গিয়ে বসেন আসনা। শিবাজিবাবুর পুত্র শ্রেয়াংশ গিয়ে বসেন আসনার বাবার বিএমডব্লিউ আই-৮ গাড়িতে। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ফেরারি থেকে বার করে আসনাকে প্রথমে একবালপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে। ক্ষতবিক্ষত তরুণীর বেশ কয়েক মাস জ্ঞান ছিল না। সুস্থ হয়ে কলকাতায় ফেরা সেই মেয়েরই জন্মদিন ছিল সোমবার। ঘটনাচক্রে ওই দিনই আবার কলেজের প্রথম ক্লাস ছিল তাঁর।

Advertisement

আসনা জানালেন, ভবিষ্যতে নিজের রেস্তরাঁ খোলার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর। বললেন, ‘‘আমার রেস্তরাঁর থিম পথ নিরাপত্তা নিয়ে করা যায় কি না, ভাবছি। অনেককে উদ্বুদ্ধ করবে ব্যাপারটা। রেস্তরাঁ করব বলেই জে ডি বিড়লা কলেজে ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন নিয়ে বিএসসি-তে ভর্তি হয়েছি। ওই বিষয়েই এমএসসি করব।’’ সঙ্গে ফরাসি ভাষা এবং স্টক মার্কেটের কোর্স করছেন তিনি।

কথায় কথায় আসনা ফিরে যান সুস্থ হওয়ার পরের প্রথম জন্মদিনে। বলেন, ‘‘রবিবার রাতে পরিবারের সকলে মিলে বাইপাসের এক হোটেলে খেতে গিয়েছিলাম আমরা। ভাই যায়নি। রাত ১২টা নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখি, ও সব সাজিয়ে রেখেছে। দারুণ সারপ্রাইজ দিয়েছে। রাত তিনটে নাগাদ ঘুমোতে গিয়ে পরের দিন সকাল সকাল উঠে পড়ি। কলেজের প্রথম দিনটা মিস করতে চাইনি।’’ এর পরে জন্মদিনে পাওয়া উপহার দেখাতে গিয়ে কিছুটা আড়ষ্ট আসনা।

হাঁটতে গেলে এখনও একটু সমস্যা হয় তাঁর। বললেন, ‘‘অন্যেরা যে সময়ে একশো পা হাঁটে, আমি হয়তো সেই সময়ে আশি পা হাঁটতে পারি। ফিজ়িয়োথেরাপি চলছে। একটা সময় তো সামান্য কাগজও ছিঁড়তে

পারতাম না। কারও সাহায্য ছাড়া কোথাও যেতে পারতাম না। বেরোতে হলে এক দিন আগে থেকে বাবাকে বলে রাখতে হত।’’ কয়েক মিনিট চুপ থেকে এর পরে আসনা বলেন, ‘‘অনেকে অনেক কিছু বলবেন, কিন্তু নিজের যেটা করতে ইচ্ছে করে, সেটা করাই ভাল। আস্তে হাঁটলে যদি মনে হয় সুবিধা হবে, তা হলে আস্তেই হাঁটুন। যাঁরা জোরে হাঁটতে চান, তাঁদের হাঁটতে দিন।’’

তবে এত কিছুর মধ্যেও আসনার দুঃখ, তিনি বাড়ি ফেরার পরে হেজ়েলকে আর সঙ্গে রাখা যায়নি। বললেন, ‘‘ভাই খুব বলেছিল, বাবাকে বোঝাতে। সংক্রমণের ভয়ে বাবারও কিছু করার ছিল না। হেজ়েল থাকলে জন্মদিনটা আরও সুন্দর হত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement