দু’বছর যৌন নিগ্রহ, চাইল্ড লাইনে ছাত্রী

এক দিন-দু’দিন নয়। টানা দু’বছর ধরে দিনের পর দিন নাবালিকা ছাত্রীর উপর যৌন নিগ্রহ চালাচ্ছিলেন প্রৌঢ় গৃহশিক্ষক। ভয়ে-লজ্জায় সে কথা নিজের মা-বাবাকেও জানাতে পারেনি একাদশ শ্রেণির ছাত্রীটি।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৫ ০৩:০৫
Share:

এক দিন-দু’দিন নয়। টানা দু’বছর ধরে দিনের পর দিন নাবালিকা ছাত্রীর উপর যৌন নিগ্রহ চালাচ্ছিলেন প্রৌঢ় গৃহশিক্ষক। ভয়ে-লজ্জায় সে কথা নিজের মা-বাবাকেও জানাতে পারেনি একাদশ শ্রেণির ছাত্রীটি।

Advertisement

মেয়েটি উপায় খুঁজে পেল, যখন শিশুদের অধিকার নিয়ে তার স্কুলে শিবির করতে এল ‘চাইল্ড লাইন।’ শিবিরের দিন কিছু বলতে না পারলেও, এক শিক্ষিকার সহায়তায় চাইল্ড লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো বিষয়টি খুলে বলে সে। চাইল্ড লাইন সব কথা জানায় মেয়েটির পরিবার এবং পুলিশ-প্রশাসনকে।

বীরভূমের দুবরাজপুরের ওই ছাত্রীর পরিবারের তরফে অবশ্য বুধবার রাত পর্যন্ত অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে চাইল্ড লাইনের আহ্বায়ক দেবাশিস ঘোষ জানান, ‘‘পরিবার অভিযোগ না করলে চাইল্ড লাইনের তরফেই অভিযোগ দায়ের করা হবে।’’ জেলা শিশুকল্যাণ আধিকারিক তথা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান নিত্যানন্দ রায় ইতিমধ্যেই এসপি মুকেশ কুমার এবং মহকুমাশাসককে বিষয়টি জানিয়েছেন। পুলিশের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হবে, জানান তিনি।

Advertisement

যৌন নির্যাতনের সামনে আজও বহু নাবালিকা যে অসহায়, এই ঘটনা আরও এক বার তা দেখিয়ে দিল। এ দিন মেয়েটির মা অসহায় ভাবে বলেন, ‘‘বাড়ির বড়রা কী বলবেন, এই ভেবে মেয়ে কোনও দিন কিছু জানানোর সাহস পায়নি।’’ তিনি জানান, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, বছর পঞ্চান্নর সেই ব্যক্তি গৃহশিক্ষকতা ছাড়াও পুরোহিতের কাজ করেন। নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবাও তাঁর কাছে পড়েছেন। ফলে, মেয়ের কাছে তাঁর আচরণ শোনার পরে কার্যত বাক্‌রুদ্ধ গোটা পরিবার।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, মেয়েটি বছরখানেক ধরে মাঝে-মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে পড়ছিল। দিন সাতেক আগে বাবা-মায়ের সঙ্গে থানায় গিয়ে নিজের বক্তব্য বলার সময়ও অজ্ঞান হয়ে যায় সে। কিন্তু তা যে তার উপরে টানা যৌন নির্যাতনের ফল এবং প্রায় দু’বছর ধরে যে বাড়ির ভিতরেই ওই নির্যাতন চলছিল, তা কেউ আন্দাজ করতে পারেননি।

স্কুলে চাইল্ড লাইনের শিবির না হলে হয়তো সেই রহস্য ফাঁসও হত না। চাইল্ড লাইন সূত্রে জানা যায়, ওই ছাত্রীর স্কুলে শিবির শেষ হওয়ার পরের দিনই সংস্থার সদস্য সোমা মিত্রের কাছে এক শিক্ষিকার ফোন আসে। তিনি জানান, তাঁদের এক ছাত্রীর চাইল্ড লাইনের সাহায্যের দরকার। সোমাদেবীর কথায়, ‘‘ফোন পেয়ে স্কুলে গিয়ে একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর কথা জানতে পারি। কাঁদতে কাঁদতে ছাত্রীটি জানায়, তার প্রৌঢ় গৃহশিক্ষক কী ভাবে দিনের পর দিন তার উপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে। মেয়েটি আমাদের কাছে ওই শিক্ষকের শাস্তি চায়।’’ স্কুল সূত্রে জানা যায়, চাইল্ড লাইন শিবির করার পরেই ছাত্রীটি সাহস করে এক শিক্ষিকাকে সব কথা জানায়। স্কুলগুলোতে এই ধরনের শিবির করা বা নিয়মিত কাউন্সেলিং কতটা প্রয়োজন, তা এই ঘটনা সামনে এনে দিল— এক বাক্যে বলছেন শিক্ষিকারা।

তবে এই ঘটনা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। চাইল্ড লাইনের আহ্বায়ক দেবাশিসবাবুর অভিযোগ, তাঁরা পরিবারটিকে সঙ্গে নিয়ে গত ১৪ জুলাই দুবরাজপুর থানায় যান। সেখানে মেয়েটির বয়ান রেকর্ড করে পুলিশ। কিন্তু তারা অভিযোগ নেয়নি। ‘‘বরং সামাজিক সম্মানহানির ধুয়ো তুলে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয় থানা। তাতে দ্বিধায় পড়ে পিছিয়ে যান বাড়ির লোকজনও’’ —অভিযোগ দেবাশিসবাবুর। পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। দুবরাজপুর থানা এ দিন জানায়, ওঁরা যখনই আসবেন, তখনই অভিযোগ নেওয়া হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement