দুই সন্তান-সহ বাবাকে পিষল ট্রাক, ভাঙচুর

মাসখানেক আগে স্কুলের সহপাঠীদের সঙ্গে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে বলেছিল— ‘ড্রাইভারকাকু আস্তে গাড়ি চালাও’। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের জয়রামপুরের সেই দুই ভাই-বোন শিবম ভুঁইয়া (১২) ও প্রিয়াঙ্কা ভুঁইয়াকে (৭) পিষে দিল ট্রাক। তাদের সঙ্গেই দুর্ঘটনায় মারা গেলেন বাবা কৃষ্ণপদ ভুঁইয়া (৩৫)। গুরুতর আহত হয়েছেন কৃষ্ণপদর স্ত্রী লক্ষ্মী ও তাঁর বড় মেয়ে পূজা।

Advertisement

শুভ্র মিত্র

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৮ ০৩:২৮
Share:

শোকার্ত: বাবা ও দুই ভাইবোনকে হারিয়ে পাপিয়া ভুঁইয়া।  নিজস্ব চিত্র

মাসখানেক আগে স্কুলের সহপাঠীদের সঙ্গে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে বলেছিল— ‘ড্রাইভারকাকু আস্তে গাড়ি চালাও’। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের জয়রামপুরের সেই দুই ভাই-বোন শিবম ভুঁইয়া (১২) ও প্রিয়াঙ্কা ভুঁইয়াকে (৭) পিষে দিল ট্রাক। তাদের সঙ্গেই দুর্ঘটনায় মারা গেলেন বাবা কৃষ্ণপদ ভুঁইয়া (৩৫)। গুরুতর আহত হয়েছেন কৃষ্ণপদর স্ত্রী লক্ষ্মী ও তাঁর বড় মেয়ে পূজা।

Advertisement

শনিবার রাতে স্থানীয় হরিণমুড়ি খালের সেতুর কাছে দুর্ঘটনার পরেই ক্ষিপ্ত জনতা রাধানগরে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। ঘেরাও করা হয় পুলিশ ফাঁড়ি। ক্ষতিপূরণের দাবিতে রবিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্রামবাসী জয়রামপুরে পথ অবরোধ করেন। পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা জানান, ট্রাকটি আটক করা হলেও চালক ও খালাসি পালিয়েছে।

গত কয়েক দিন ধরে জয়রামপুরের পাশের রাধানগরে গাজনের মেলা চলছে। সে জন্য রাস্তায় ভিড় ছিল। শনিবার রাত ৯টা নাগাদ সোনামুখীগামী একটি খালি ট্রাক প্রথমে রাধানগর গ্রন্থাগারের কাছে আমরেল গ্রামের যুবক সাইকেল আরোহী সন্টু বাউরিকে ধাক্কা মারে। এর পরেই চালক আরও জোরে গাড়ি ছোটায়। চার সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে মেলা থেকে ফিরছিলেন কৃষ্ণপদ। সরু সেতুর মুখে ট্রাকটি বেসামাল হয়ে তাঁদের ধাক্কা মেরে পাশের জমিতে নেমে যায়।

Advertisement

লক্ষ্মী ও সন্টু বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় পূজাকে কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কপাল জোরে রক্ষা পেয়েছে কৃষ্ণপদর মেজো মেয়ে পাপিয়া। সে বলে, ‘‘ট্রাকের শব্দ পেয়েই সবাই রাস্তার এক পাশে সরে যাই। তার পরেও ট্রাকটা দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল। কিছুটা এগিয়ে থাকায় রক্ষা পেয়েছি। কিন্তু, পরিবারটা শেষ হয়ে গেল।’’

রাধানগরে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আহতদের নিয়ে গিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে বাসিন্দারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁরা জরুরি বিভাগে চিকিৎসার সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। মেলার ভিড়ে রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ না থাকার অভিযোগ তুলে স্থানীয় ফাঁড়িও ঘেরাও করা হয়। বিএমওএইচ হিমাদ্রিকুমার ঘটক বলেন, ‘‘সাধারণের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স নেই ঠিকই। কিন্তু, ভাঙচুর কেন করা হবে?’’ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘ফাঁড়ি ঘেরাও করে পুলিশ কর্মীদের হেনস্থার জন্যও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement