অধীররঞ্জন চৌধুরী ও আবু হাসেম খান চৌধুরী। ফাইল চিত্র।
আদাজল খেয়ে নেমেছিল রাজ্যের শাসক দল। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে দায়িত্ব নিয়েছিলেন রাজ্যের এক ডাকসাইটে মন্ত্রী। গোটা প্রশাসন নেমে পড়েছিল ময়দানে। এত কিছুর পরেও শেষ হাসি তোলা থাকল তাঁর জন্যই!
ব্যবধান কমে গেল অনেক। কিন্তু বহরমপুর থাকল অধীররঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গেই। কঠিন পরিস্থিতিতে, প্রবল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে একার হাতে লড়াই চালিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির জোড়া থাবা থেকে গড় রক্ষা করলেন অধীর। কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতারা এক বাক্যে মানছেন, বহরমপুরই এখন এই বাংলায় সেই অর্থে ‘মরূদ্যান’!
দিনভর রোলার-কোস্টার রাইডের মতো ওঠা-নামার পরে বৃহস্পতিবার রাতে কংগ্রেসের জন্য স্বস্তির খবর আনতে পেরেছেন আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরীও। ভিভিপ্যাট মেলানোর আগে পর্যন্ত মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রে ডালুবাবু জিতছেন ১৬ হাজার ২৮২ ভোটে। অধীর আর ডালুর হাত ধরে মুর্শিদাবাদ ও মালদহের পুরনো ঘাঁটিতে কংগ্রেস ধরে রাখতে পেরেছে দু’টি আসন। রাজ্যে তাদের সার্বিক ভোটপ্রাপ্তির গড় ৫.৫২%।
কংগ্রেসের এই দুই আসন রক্ষায় অবদান থাকল সিপিএমেরও। দু’জনের বিরুদ্ধেই প্রার্থী দেয়নি সিপিএম। তৃণমূল এবং বিজেপির জোড়া আক্রমণ মোকাবিলা করে আসন বার করতে অধীর-ডালুকে সাহায্য করেছে সিপিএমের সমর্থন। বামফ্রন্টের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বহরমপুরে আরএসপি অবশ্য প্রার্থী দিয়েছিল। তবে সেই প্রার্থী ঈদ মহম্মদ ১৩ হাজার ৩৩৮টি ভোট পেয়ে এক নির্দল এবং ‘নোটা’র পিছনে থেমেছেন! সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের মন্তব্য, ‘‘তীব্র মেরুকরণের আবহে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে অধীরবাবু যে ভাবে জিতে এসেছেন, তাকে কুর্নিশ করতেই হয়।’’
পরিস্থিতির বিচারে ডালুবাবুর চেয়ে কঠিন ছিল অধীরের যুদ্ধ। তাঁর নিজের কথায়, ‘‘মোদী আর দিদি, এই ভাবে ভোট ভাগ হয়েছে। সেই মেরুকরণের মোকাবিলার পাশাপাশি প্রশাসনিক যন্ত্রের সঙ্গে লড়তে হয়েছে। বহরমপুরের ২৬৮টা বুথে আমাদের এজেন্ট ছিল না। সেখানে নীরবে কিছু লুট হয়েছে। এত কিছু অতিক্রম করে এই জয় এসেছে।’’ পাঁচ বছর আগে অধীর জিতেছিলেন সাড়ে তিন লক্ষের বেশি ভোটে। এ বারের ব্যবধান নেমে আসছে ৭৮ হাজার ২৮২-তে। শুধু বহরমপুর বিধানসভা এলাকা থেকে কংগ্রেস প্রার্থী ‘লিড’ পেয়েছেন প্রায় ৯০ হাজারের। কিন্তু কান্দি তো বটেই, রেজিনগর, বেলডাঙার মতো চেনা তালুক থেকেও অপ্রত্যাশিত ধাক্কা এসেছে। যে কারণে জয়ের ব্যবধান কমেছে। অধীরের মতে, ‘‘আমরা ক্রস-ফায়ারের মধ্যে পড়ে গিয়েছি। সংখ্যালঘুদের বড় অংশই বিজেপির হাত থেকে বাঁচতে তৃণমূল বেছেছেন। এই জেলায় মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর তৃণমূল জিততে পেরেছে।’’
আরও পড়ুন: মাটি কামড়ে থেকে দিল্লির পথে মহুয়া
বহরমপুরের জন্য সাংসদ অধীরের কাজও তাঁর পুঁজি হয়েছে। বিজেপির এক নেতা যোগ করছেন, ‘‘দল ভেঙে কংগ্রেসের বিধায়ক, পুরপ্রধান, পঞ্চায়েত কিংবা জেলা পরিষদে পা বাড়ানো অধীরের পুরনো সহকর্মীদের বেইমানি যে মানুষ ভাল ভাবে নেননি, অধীরকে ভোট দিয়ে তাঁরা সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন।’’ আবার জেলা তৃণমূলের এক নেতা স্বীকার করছেন, ‘‘পঞ্চায়েতে ভোট দিতে না-পারা মানুষের একাংশের ক্ষোভও ভোট হয়ে ফিরে এসেছে অধীরের বাক্সে।’’ অধীর-ডালুর লড়াইকে সেলাম জানিয়েই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের বক্তব্য, ‘‘মেরুকরণের ভোট হয়েছে বাংলায়। আমরা তার মাসুল দিয়েছি। এই আবহ তৈরি করে বিজেপিকে সুযোগ দেওয়ার জন্য তৃণমূলকে আরও ভুগতে হবে, রাজ্যকেও ক্ষতি স্বীকার করতে হবে।’’
আরও পড়ুন: আরাবুল বাহিনীর বিরুদ্ধে ঘরে ঢুকে হামলার অভিযোগ ভাঙড়ে, রাস্তা আটকালেন গ্রামবাসীরা