গয়নার দোকান ‘অদ্রিজা’-সহ রোজ ভ্যালি সংস্থার সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করলেন গৌতম কুণ্ডুর স্ত্রী শুভ্রা কুণ্ডু।
বুধবার হাওড়া ও কলকাতায় ওই গয়না প্রস্তুতকারক সংস্থার তিনটি দোকান ও শো-রুমে অভিযান চালিয়ে যাবতীয় গয়না তুলে নিয়ে এসেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বৃহস্পতিবার ফোনে শুভ্রা জানান, দিন তিনেক আগেই তিনি এই সংস্থা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।
রোজ ভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডু ২০১৫ সালে ইডি-র হাতে গ্রেফতারের পর থেকেই শিরোনামে উঠে এসেছেন শুভ্রাদেবী। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, গৌতমের ফেলে যাওয়া সাম্রাজ্য পরিচালনার ভার নিজের হাতে তুলে নেবেন তিনি। কিন্তু অন্তরালেই রয়ে যান শুভ্রা। ইডি-র যে অফিসার রোজ ভ্যালির তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁর সঙ্গে শুভ্রার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে শুরু হয় চর্চা। তাঁদের দু’জনের ছবিও প্রকাশ হয়।
পরে আনন্দবাজার-কে শুভ্রা জানান, নিজের এবং ছেলে-মেয়ের খরচ চালানোর জন্য তিনি অদ্রিজায় চাকরি করতেন। খাতায়-কলমে অদ্রিজার ডিরেক্টর মিতা চৌধুরী। বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব মেলেনি। তবে ইডি-র অভিযানের ঠিক আগে অদ্রিজা থেকে শুভ্রার ইস্তফা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রোজ ভ্যালির তদন্তকারীরা।
এ দিন শুভ্রা বলেন, ‘‘আমি অদ্রিজায় জেনারেল ম্যানেজার মার্কেটিং ও সেলস-এর দায়িত্বে ছিলাম। চাকরি ছেড়ে নিজে কিছু করবো বলে অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম। মাঝে জেমোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট অব ইউএসএ-এ থেকে রত্ন বিষয়ক একটি কোর্স করেছি। আমাকে এখন রত্ন-বিশেষজ্ঞ বলা যেতে পারে। সেই ধরনেরই কোনও কাজের খোঁজে রয়েছি।’’ গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদের মামলাও চলছে। অদ্রিজা ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গৌতমের সংস্থাগুলির সঙ্গে তাঁর যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল বলে জানিয়েছেন শুভ্রা।
চাঁদনি এলাকার এক ব্যবসায়ীর অফিসে অভিযান চালিয়ে শুভ্রার নাম পায় বলে দাবি করে কলকাতা পুলিশ। অভিযোগ ওঠে, সেই ব্যবসায়ীর মাধ্যমে বহু টাকা শুভ্রা বিদেশে পাচার করেছেন।
অদ্রিজা সূত্রে খবর, বুধবারের অভিযানের পরে মাথায় হাত পড়েছে প্রায় ১২০ জন কর্মীর। আপাতত বন্ধ এই গয়নার দোকান। গয়না বানানোর অগ্রিম দিয়ে গিয়েছিলেন বেশ কয়েক জন গ্রাহক। সেই সব গয়নাও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তাঁদের অগ্রিম কী ভাবে ফেরত দেওয়া হবে, তা নিয়ে চিন্তায় তাঁরা। কারণ অদ্রিজা-র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিও সিল করে দিয়েছে ইডি।
ইডি সূত্রের খবর, বুধবার সারা দিন ধরে হাওড়া, লেক মার্কেট ও তেঘরিয়ায় সংস্থার তিনটি দোকানে হানা দিয়ে যাবতীয় সোনা ও হিরের গয়না তুলে নিয়ে রাখা হয়েছে ব্যাঙ্কের লকারে। সেই কাজ চলেছে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত। এই তিনটি জায়গা থেকে বেশ কিছু নাম পাওয়া গিয়েছে, যাঁদের সঙ্গে সংস্থার বড় অঙ্কের লেনদেন রয়েছে।