গৌতম দেব। ছবি: সংগৃহীত
এক রবীন্দ্র ভবন থেকে শুরু হয়েছিল। শেষও সম্ভবত হতে চলেছে আর এক রবীন্দ্র ভবনে!
শরীরের সঙ্গে যুদ্ধে আর পেরে উঠতে না পেরে দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে তিনি অব্যাহতি চান বলে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন গৌতম দেব। উত্তর ২৪ পরগনার মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলায় গৌতমবাবুর উপযুক্ত বিকল্প এখনই খুঁজে পাওয়া মুশকিল জেনেও তাঁর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে জোর খাটাতে চাইছে না আলিমুদ্দিন। জেলা সম্মেলনের আগে হাতে রয়েছে আরও মাসদুয়েক সময়। সেই সময়ের মধ্যে বিকল্প মুখ সন্ধানের চেষ্টা গতি পেয়েছে। এখনও পর্যন্ত আলোচনায় রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তিন নেতার নাম।
রাজ্যের ক্ষমতা থেকে সিপিএম বিদায় নেওয়ার বছরখানেকের মধ্যেই খানিকটা চমক দিয়ে দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল গৌতমবাবুকে। দমদমের রবীন্দ্র ভবনে ২০১২ সালের সেই জেলা সম্মেলনে গৌতমবাবু জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে পলিটব্যুরো থেকে বিশেষ সম্মতি আদায় করেছিল আলিমুদ্দিন। কারণ, গৌতমবাবু দলের কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য। সিপিএমের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, একই সঙ্গে তিনটি স্তরের কমিটির সদস্য থাকা যায় না। সেই বিশেষ ছাড়পত্রই আদায় করা হয়েছিল গৌতমবাবুর জন্য। এ বার সব ঠিকমতো চললে আগামী ২৮ থেকে ৩১ জানুয়ারি দলের জেলা সম্মেলনে সম্পাদকের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন তিনি। এবং এ বারের সম্মেলনও আর এক রবীন্দ্র ভবনে! বরানগরের।
দলের অন্দরে গৌতমবাবুর এখন পছন্দের পাত্র তরুণ নেতা পলাশ দাস। যদিও জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসাবে বিধাননগর অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত পলাশকে এখনই গোটা জেলার ভার দেওয়া উচিত হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান রাজ্য নেতৃত্ব। ছাত্র রাজনীতিতে নজরকাড়া ইনিংস দিয়ে শুরু করা বর্ষীয়ান নেতা নেপালদেব ভট্টাচার্য অনেক দিন ধরেই জেলা সম্পাদকের দৌড়ে আছেন। তবে তাঁকে নিয়ে আবার জেলা সিপিএমের অন্দরে নানা সমীকরণের লড়াই আছে। এই পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক কালে চর্চায় উঠে এসেছে বসিরহাটের নেতা মৃণাল চক্রবর্তীর নাম। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এই নেতাকে নিয়ে জেলার শিবির বিভাজনে বিশেষ সমস্যা নেই। দলের একাংশের আরও যুক্তি, উত্তর ২৪ পরগনার মতো বড় জেলার দায়িত্ব শিল্পাঞ্চলের কোনও নেতাকেই দিতে হবে, এই ছক ভেঙে বেরোনো যাবে মৃণালবাবুকে বেছে নেওয়া হলে।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘গৌতমদা’র শরীরটা সত্যিই সমস্যার কারণ। সেটা বিবেচনায় রেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার, নিতে হবে।’’ দলের গঠনতন্ত্রের সংস্থান মানলে তিন দফায় জেলা সম্পাদক থাকতে পারেন কেউ। গৌতমবাবুর এখন চলছে দ্বিতীয় দফা। কিন্তু এই শরীরে গোটা জেলায় ছুটে বেড়ানো অসুবিধাজনক হয়ে যাচ্ছে গৌতমবাবুর পক্ষে। সামনে পঞ্চায়েত ও তার পরে লোকসভা ভোট রয়েছে। তাই ভাবতেই হচ্ছে আলিমুদ্দিনকে।