এসজেডিএ দুর্নীতি-মামলা নিয়ে ঘরে বাইরে চাপের মুখে পড়ে এ বার দলের মুখ বাঁচাতে আসরে নামলেন সংস্থার চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। শুক্রবার দুপুরে এসজেডিএ দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করে গৌতমবাবু জানিয়ে দেন, দুর্নীতিতে জড়িত থাকলে কাউকে ছাড়ার প্রশ্ন নেই। গৌতমবাবুর বক্তব্য, ‘‘দুর্নীতির মামলা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই হয়েছে। অশোকবাবুকে (অশোক ভট্টাচার্য) এত চিন্তা করতে হবে না। ওঁরা তো হাইকোর্টে সিবিআই তদন্ত চেয়ে একটি মামলাও করেছেন। হাইকোর্টে সব জানিয়েছি।’’
বিরোধীদের দাবি, চাপের মুখে পড়েই এই দিন সাংবাদিক সম্মেলন করতে হল গৌতমবাবুকে। এর আগে মেয়র অশোকবাবু কলকাতায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করে এসজেডিএ দুর্নীতির তদন্তে প্রশাসন দোষীদের আড়াল করছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। এই মামলায় তৃণমূলের যে নেতাদের পুলিশ জেরা করেছে, তাঁদের কারও নামই সিবিআইয়ের চার্জশিটে নেই।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূলের অন্দরেও। তৃণমূলের দাবি, যে নেতারা এই দুর্নীতিতে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁদের আড়াল করলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।
এই পরিস্থিতিতে পাল্টা আক্রমণের জন্যই গৌতমবাবু সাংবাদিক সম্মেলন করলেন বলে বিরোধীদের দাবি। গৌতমবাবু অভিযোগ করেন, বাম আমলেও এসজেডিএ-তে দুর্নীতি হয়েছে। উত্তরায়ণের ৪০ একর জমি একটি সংস্থাকে পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে মন্ত্রীর অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘দু’টি সমীক্ষা করিয়েছি। কিছু দিনের মধ্যে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ার দিকেও যেতে পারি।’’
গৌতমবাবু যে সময়ের কথা বলেছেন, তখন এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান ছিলেন শিলিগুড়ির বর্তমান মেয়র অশোকবাবু। এ দিন তাঁর বক্তব্য, ‘‘অনেক দিন এ সব ভিত্তিহীন অভিযোগ শুনছি। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট যেখানে ইচ্ছা যেতে পারেন। ওঁর জানা দরকার, জমিটা ভূমি দফতর হস্তান্তর করেছিল। পুর দফতর বা এসজেডিএ করেনি।’’ তাঁর বরং দাবি, ‘‘প্রশাসন কাদের আড়াল করতে চাইছে, তাঁদের শিলিগুড়ির লোক চিনে গিয়েছেন।’’
তৃণমূলের আমলে এসজেডিএ-তে দুর্নীতির ক্ষেত্রে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত রিপোর্টের একটি অংশকে হাতিয়ার করে অশোকবাবু দাবি করেন, বোর্ড সদস্যদের এড়িয়ে এত বড় দুর্নীতি হতে পারে না। গৌতমবাবু জানান, সিআইডি, ইডি-র তদন্ত হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘এটা নিয়ে বিরোধীদের লাফালাফি করার দরকার নেই।’’
এদিন গৌতমবাবু জানান, এসজেডিএ-র ১৪২ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত ছিল। তাঁর দাবি, তিনি দায়িত্বে আসার পর সেই স্থায়ী আমানতে আর হাত দেওয়া হয়নি। সেখানে ৪২ কোটি টাকা রয়েছে। একজন ইঞ্জিনিয়র সাসপেন্ড হয়েছেন। ৩ জন চুক্তি ভিত্তিক ইঞ্জিনিয়রকে কর্মচ্যুত করা হয়েছে। পুলিশ এবং ইডি ১৭ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে। বাকি টাকার খোঁজ চলছে।