CBI

সিআইএসএফ-ইসিএল রেলকর্মীদের মদতেই বাংলায় সক্রিয় ছিল ‘গ্যাংস অব লালা’

কয়লা পাচার চক্রের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে গরুপাচার-কাণ্ডে অভিযুক্ত এনামুল হকেরও। চক্রের জাল কতদূর, তদন্তে এফআইআর করল সিবিআই।

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২০ ১৯:৪২
Share:

কয়লা পাচার চক্রের নেপথ্য কোনও রাজনৈতিক যোগ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কয়লা-কাণ্ডে ‘কেঁচো’ খুড়তে একে একে ‘কেউটের’ সন্ধান পাচ্ছে সিবিআই।

Advertisement

বাংলায় অনুপ মাঝি ওরফে লালার ‘কয়লা সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলতে সরকারি কর্মী থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর একাংশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে জানতে পেরেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। খনি থেকে বেআইনিভাবে কয়লা তোলার পর পাচার — এই গোটা প্রক্রিয়া চলত নিখুঁত হিসেবকষে। তার পর মাসের নির্দিষ্ট সময়ে সাহায্যকারীদের টাকার ভাগ পৌঁছে দিত লালা। এই চক্রের নেপথ্য কোনও রাজনৈতিক যোগ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।

আজ, শনিবার কলকাতা, আসানসোল, রানিগঞ্জ, দুর্গাপুর, সল্টলেক-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একযোগে তল্লাশি অভিযানে নামে সিবিআই। কলকাতায় সিল করে দেওয়া হয়েছে বেপাত্তা লালার ফ্ল্যাট। প্রায় ৭ ঘন্টা সল্টলেকের বাড়িতে চলেছে তল্লাশি। পুরুলিয়ার লালার বাড়িতেও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা হানা দিয়েছেন। কিন্তু লালা এখনও গোয়েন্দাদের নাগালে আসেনি।

Advertisement

আরও পড়ুন: লালা কোথায়? কয়লা-কাণ্ডে রাজ্য জুড়ে সিবিআই তল্লাশি

আরও পড়ুন: শুভেন্দু দলত্যাগ করবেন ধরেই কৌশল সাজাচ্ছেন মমতার সৈনিকরা

বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে কয়লা পাচার চক্র। তবে কয়লা পাচারের উৎস ছিল খোদ ইস্টার্ন কোলভিল্ড লিমিটেড (ইসিএল)-এর বিভিন্ন খনি এবং অফিস। ভিজিলেন্স ডিপার্টমেন্ট এবং সংস্থার টাস্ক ফোর্স প্রথম কয়লা-দুর্নীতির আঁচ পায়। ইসিএল-এর খনিগুলোতে সেখানকার কর্মীদের মদতেই বেআইনি ভাবে কয়লা খনন (মাইনিং) করা হত বলে সূত্রের খবর। তার পর নিরাপত্তা বাহিনী এবং সিআইএসএফ-এর কর্মীদের মদতে লালার সাকরেদরা পাচার করত। এ ক্ষেত্রে সাহায্য নেওয়া হত রেলকর্মীদেরও। তদন্তে উঠে আসে এমনই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

কয়লা পাচার চক্রের জাল কতদূর, কী ভাবে ছড়িয়েছে, তা জানতে কোমর বেঁধে নেমেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

৭ অগস্ট পাণ্ডবেশ্বরের রেলওয়ে সাইডিং এলাকায় প্রায় ৯ মেট্রিক টন কয়লা চুরি যাওয়ার ঘটনা সামনে আসে। একই ভাবে অন্যান্য রেলওয়ের সাইডিং-এ চুরির ঘটনা ধরা পড়ে। এর পরই সর্ষের মধ্যে ভূত খুঁজতে তৎপরতা শুরু হয়। তদন্তে নামে আয়কর দফতরও। জিএসটি-সহ নানা নথিপত্রে প্রমাণ আরও জোরাল হয়। শিকড় অনেক দূর ছড়িয়ে গিয়েছে, বুঝতে পেরে আসরে নামে সিবিআই। জানা গিয়েছে, শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, বিহার, ঝাড়খণ্ডে ‘গ্যাং অব লালা’-এর চক্র সক্রিয় রয়েছে।

শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, বিহার, ঝাড়খণ্ডে ‘গ্যাং অব লালা’-এর চক্র সক্রিয় রয়েছে। ছবি: পিটিআই।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে গা ঢাকা দেয় লালা। এই চক্রে বেশ কয়েকজনের নামের খোঁজ পায় সিবিআই। ইতিমধ্যে কুনস্তরিয়া ইউনিটের জেনারেল ম্যানেজার, সিকিউরিটি ইন্সপেক্টরের এবং কাজোরিয়া ইউনিটের জেনারেল ম্যানেজার, আসানসোলের চিফ সিকিরিটি ম্যানেজার, কাজোরিয়ার সিকিউরিটি ইনচার্জ এবং লালার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি ১২০বি, ৪০৯ এবং পিসি অ্যাক্ট ১৩(২) আর/ডব্লু, ১৩ (১),(এ)-তে এফআইআর করেছে সিবিআই। এফআইআর-এ ইসিএল, সিআইএসএফ, ভারতীয় রেল এবং অন্যান্য সরকারি দফতরের ব্যক্তিদেরও নাম রয়েছে। কয়লা পাচার চক্রের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে গরুপাচার-কাণ্ডে অভিযুক্ত এনামুল হকের। কয়লা পাচার চক্রের জাল কতদূর, কী ভাবে ছড়িয়েছে, তা জানতে কোমর বেঁধে নেমেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। এখন দেখার কয়লা তদন্তে রাঘববোয়ালরা জালে পড়ে কি না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement