সাগর মেলায় পুণ্যার্থীর সংখ্যা নগণ্য। বুধবার সকালে। ছবি: পিটিআই
করোনা অতিমারির জেরে ভিড় নেই সাগর মেলায়। তার উপর এ বছর ঘরে বসে ই-স্নান ও দর্শনের বন্দোবস্ত থাকায় মেলামুখো হননি অনেকে। ফলে কার্যত মাছি তাড়াচ্ছেন দোকানদাররা। লকডাউনে চরম লোকসানের মুখে পড়ে সাগর মেলায় কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় ছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সেই আশায় কার্যত জল ঢেলে দিয়েছে ভাইরাস।
সব তীর্থ বার বার, গঙ্গাসাগর এক বার। এমন পুণ্যলাভের মহাসুযোগ ছাড়তে চান না কেউই। তাই প্রতি বছর গঙ্গাসাগরে থাকে গিজগিজে ভিড়। লঞ্চ-জেটিতে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। কিন্তু এ বছর সব হিসেব ওলট-পালট করে দিয়েছে করোনা অতিমারি। এ বছর ভিড় নেই পুণ্যার্থীদের। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ই-স্নানের ব্যবস্থা করায় ঘরে বসেই দর্শন ও স্নান সারছেন পুণ্যার্থীরা। তাতে বিপুল সাড়া। মাত্র ১৫০ টাকা দিলেই বাড়িতে পৌঁছে যাবে সাগরের জল ও প্রসাদ-সহ নানা সামগ্রী। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ এই ই-স্নানের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন। অনলাইনে অর্ডারের পাশাপাশি একাধিক জায়গায় খোলা হয়েছে ই-স্নানের কাউন্টার। এর মধ্যে রয়েছে বাবুঘাটে ৫টি, সাগর মেলা প্রাঙ্গণে ৫টি এবং লট নম্বর ৮-এ ২টি।
কিন্তু এই ই-স্নান এবং করোনা অতিমারি কার্যত অভিশাপ হয়ে উঠেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী-দোকানদারদের কাছে। এ বার মেলায় জনসমাগম অত্যন্ত কম। প্রতি বছর মেলায় ৩৫ থেকে ৪০ লক্ষ পুণ্যার্থী আসেন। জেলা প্রশাসনের হিসেবে এ বছ পুণ্যার্থীর সংখ্যা মেরেকেটে ৪ লক্ষে পৌঁছতে পারে। তাই হতাশ ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় ব্যবসায়ী মিলন মাইতি বলেন, ‘‘লকডাউনে অনেক দিন ধরে ব্যবসা বন্ধ ছিল। ভেবেছিলাম এবারের মেলায় কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারব। কিন্তু এবারের তীর্থযাত্রীর সংখ্যা প্রায় অত্যন্ত কম। বিক্রি প্রায় নেই বললেই চলে।’’
দেখুন ভিডিয়ো:
আরও পড়ুন: আবাসনে বিপুল বিনিয়োগ, কালো টাকার উৎস খুঁজতে প্রাক্তন বিধায়কের হোটেল-অফিসে তল্লাশি
ব্যবসায়ীদের মতই ক্ষতির আশঙ্কা করছেন লঞ্চ মালিকরা। সাগর দ্বীপে আসতে দুটি জলপথ রয়েছে। একটি কাকদ্বীপের লট-৮ নম্বর ঘাট থেকে সাগরের কচুবেড়িয়া পর্যন্ত ভেসেল পরিষেবা। অন্যটি নামখানা থেকে সাগরের বেনুবন পর্যন্ত। দু’টি রুটেই অধিকাংশ লঞ্চ ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। কিন্তু এ বারের সাগর মেলায় তীর্থযাত্রীর সংখ্যা খুব কম থাকায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে লঞ্চ মালিকরা। নামখানার এক লঞ্চ মালিক বাসুদেব মণ্ডল, ‘‘সকাল থেকে ঘাটে বাঁধা রয়েছে ৩০টির মত লঞ্চ। কিন্তু যাত্রীর সংখ্যা খুব কম থাকায় প্রতি টিপেই লোকশান হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: ৭২ ঘণ্টায় দিদিকে ‘টুইট-বাণ’ নেই ধনখড়ের, তবে কি এখন শান্তিপথে
অন্য দিকে এদিন গঙ্গাসাগর মেলা অফিসে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পূর্ত মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানালেন, "গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় দু'লক্ষের বেশি তীর্থযাত্রী সাগর মেলায় এসেছেন। হাইকোর্টের সব নির্দেশিকা মেনেই এবারের মেলা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১.৫ লক্ষ তীর্থযাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। ১৪ হাজার তীর্থযাত্রীর উপর র্যাপিড টেস্ট চালানোয় ৫ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের জীবাণু মিলেছে।"