গঙ্গাসাগর মেলার আগে কপিলমুনির আশ্রমের সামনে চলছে রং করার কাজ। ছবি সমরেশ মণ্ডল
নিছক চোখরাঙানি নয়। কার্যত হামলে পড়েছে করোনার নতুন অবতার ওমিক্রন। এই অবস্থায় জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সাগরমেলার প্রস্তুতিতে কোভিড মোকাবিলাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে প্রশাসন। সোমবার নবান্ন সভাঘরে মেলা-প্রস্তুতির ব্যাপারে প্রশাসনের শীর্ষ মহল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন দফতর, মেলার আয়োজকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপরে বিশেষ জোর দিয়েছে নবান্ন। জোর দেওয়া হচ্ছে নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপরেও। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পরিস্থিতি ঘোরালো মনে হলে কড়া নিয়ন্ত্রণ বিধি বলবৎ করা হতে পারে গঙ্গাসাগরে। করোনা-সতর্কতার সঙ্গে সঙ্গে মমতার সিদ্ধান্ত, ভিন্ রাজ্যের পুণ্যার্থীদের কাছে বাংলার উন্নয়ন প্রকল্পগুলি তুলে ধরার উপযুক্ত প্রচার পদ্ধতিও তৈরি করতে হবে।
আজ, মঙ্গলবার মেলা-প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে গঙ্গাসাগরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক করার কথা। মেলা হবে ৮-১৬ জানুয়ারি। ১৪ জানুয়ারি বেলা ১১টা ৪৬ মিনিট থেকে ১৫ জানুয়ারি ভোর ৫টা ৭ মিনিট পর্যন্ত পুণ্যস্নান। গত বছর ভরা করোনাকালে পুণ্যার্থীর সংখ্যা কম ছিল। এ বছর পরিবহণ পুরোপুরি সচল। নিয়ন্ত্রণ বিধিও অনেকটাই শিথিল। ফলে ভিন্ রাজ্য থেকে লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর সমাবেশ হতে পারে বলে মনে করছে রাজ্য প্রশাসন। তাই আগের মতোই প্রস্তুতি রাখতে চাইছে নবান্ন।
রাজ্যে এখন দৈনিক কোভিড সংক্রমণ পাঁচশোর ঘরে ঘোরাফেরা করছে। জানুয়ারির একটি সপ্তাহে বিপুল জনসমাগম হলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, সেটা ভাবে রাখতে হচ্ছে সরকারকে। তার উপরে রয়েছে ওমিক্রন-আতঙ্ক। এ দিন বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কোভিড পরিস্থিতি চলছে। কোনও সমস্যা যাতে না-হয়, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এখনও তেমন কিছু হয়নি। কিন্তু কিছু কিছু কেস আসছে। এক জন বিমানে আসছেন, তাঁর হয়তো ধরা পড়ছে। সঙ্গে আসছেন অন্তত ৩০০ জন। তাঁরা আরও তিন হাজার জনের সঙ্গে মিশছেন। বাইরে থেকে আসছে বলেই এখন থেকে সতর্ক থাকতে হবে।”
প্রথমে স্থির ছিল, সাগরমেলার প্রবেশপথে ১৩টি স্বাস্থ্য শিবির করা হবে। সেখানে আরটিপিসিআর পরীক্ষার পরিকাঠামো থাকবে। কিন্তু মমতার নির্দেশ, শুধু সেখানে নয়, ময়দানে, যেখানে পুণ্যার্থীরা জমায়েত হন, সেখানেও কোভিড পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এসএসকেএম হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলে কী ভাবে দ্রুত পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে। মেলাতেও বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে। তাঁদের মূল দায়িত্বই হবে, মাস্কের ব্যবহার এবং দূরত্ব-বিধি নিশ্চিত করা। এ ব্যাপারে বিভিন্ন ভাষায় নিয়মিত প্রচারের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। সামগ্রিক ভাবে কোভিড এবং সাধারণ চিকিৎসার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো তৈরির পাশাপাশি গ্রিন করিডর করে রোগী যাতায়াতের সুবিধা প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে
এ বারেও মেলায় ভিআইপি-দের গতিবিধিতে রাশ টানছে সরকার। নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপরে বাড়তি নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি, স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে পৃথক পৃথক কন্ট্রোল রুম থাকবে। এডিজি (সিআইডি) জ্ঞানবন্ত সিংহের নেতৃত্বে আট জন আইপিএস অফিসার গোটা পরিস্থিতির উপরে নজরদারি চালাবেন। মন্ত্রীদের মধ্যে ফিরহাদ হাকিম, পুলক রায়, অরূপ বিশ্বাস, মন্টুরাম পাখিরা, গিয়াসুদ্দিন মোল্লা, বঙ্কিম হাজরা, সৌমেন মহাপাত্র এবং মানস ভুঁইয়াকে মেলায় নজরদারির দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা। বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁরা প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলবেন। পাশাপাশি দলের বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার, সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী, শামিমা শেখ, মণীশ গুপ্তও থাকবেন সমন্বয়কারীদের দলে।
মমতা বলেন, “মেলায় কেউ যাতে কুকর্ম-দুষ্কর্ম বা প্ররোচনা দিতে না-পারেন, সে-দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোনও রকম গোলমাল বাধানোর চেষ্টা যেন না-হয়। এটা প্রচার করতে হবে যে, কেউ যা খুশি বললে তা বিশ্বাস করার বদলে প্রশাসনের উপরে আস্থা রাখা জরুরি। হলদিয়া থেকেও অনেকে মেলায় আসেন। সেখানে নজর রাখবে জেলা প্রশাসন।”
বৈঠকেই মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে মমতা নির্দেশ দেন, ভিন্ রাজ্য থেকে যাঁরা আসবেন, তাঁদের সামনে বাংলার উন্নয়ন প্রকল্পগুলি হোর্ডিংয়ের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। সেই সব প্রচার-বার্তায় প্রাধান্য দেওয়া হবে হিন্দিকে। যাতে ভিন্ রাজ্যের মানুষের বুঝতে অসুবিধা না-হয়।