বিক্রি না হওয়ায় সামসি বাজারে আম ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। ছবি: বাপি মজুমদার।
অল্পেতে সাধ মেটে না, মালদহের আমের স্বাদের কোনও ভাগ হবে না। এক বার খেলে অন্য কোথাওকার আম আর মুখে রুচবে না।
মঙ্গলবার থেকে রাজধানীর পথে-হাটে আম নিয়ে এমনই কথা গান গেয়ে প্রচার চালাতে দেখা যাবে মালদহের গম্ভীরা শিল্পীদের। ভিনরাজ্যে আমের বাজার তৈরি করতে গম্ভীরা শিল্পীদের নিয়ে রবিবার দিল্লি রওয়ানা হয়ে গিয়েছে উদ্যান পালন দফতরের একদল প্রতিনিধি।
দু’দশক বাদে এ বার আমের রেকর্ড ফলন হয়েছে মালদহে। কিন্তু ফলন হলেও দাম না মেলায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। চাহিদার তুলনায় যোগান প্রচুর বেড়ে যাওয়ায় স্বস্তিতে নেই উদ্যান পালন দফতরও। তাই এ রাজ্যের একাধিক শহরে মালদহের আমের প্রদর্শনীর পর এ বার গন্তব্য দিল্লি। ২৩ জুন-৫ জুলাই পর্যন্ত দিল্লিতে আমের প্রদর্শনীর পাশাপাশি গম্ভীরা শিল্পীদের দিয়ে গানের মাধ্যমে প্রচার চলবে বলে উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
জেলা উদ্যান পালন দফতরের উপ অধিকর্তা হৃষিকেশ খাঁড়া বলেন, ‘‘বিক্রির উদ্দেশ্যে মালদহের দশ জাতের আম নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দিল্লিতে।’’
উদ্যান পালন দফতর জানায়, ১৯৯৫ সালের পর ২০ বছর বাদে এ বার মালদহে আমের রেকর্ড ফলন হয়েছে। আম উত্পাদন হয়েছে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু শুধু উত্পাদনের তুলনায় চাহিদা কম থাকায় আমের দাম কমে গিয়েছে তা ঠিক নয়। এ বার আমের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রচণ্ড গরম। গত ২০ মে থেকে এ মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত রোদের প্রখর তাপে অপরিণত অবস্থাতেই আমে পাক ধরায় পচনের ভয়ে চাষিরা আম পেড়ে নিয়েছেন। তাই একই সময়ে বাজারে প্রচুর যোগান দেখা গিয়েছে। বাজারে বিভিন্ন জাতের আম একে একে ওঠার কথা। যেমন এখন হিমসাগর আম ওঠার সময়। কিন্তু এখন বাজারে ওই আম নেই। ল্যাংড়া পরে ওঠার কথা থাকলেও বাজার জুড়ে এখন শুধুই ল্যাংড়া। শেষ হয়ে গিয়েছে গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ। অপরিণত অবস্থায় আম পাড়ায় তাতে দ্রুত পচন ধরছে। কিন্তু গরমের হাত থেকে যাঁদের আম রক্ষা পেয়েছে তাঁরা ভাল দাম পাবেন বলে আশা করছে উদ্যান পালন দফতর।’’
সে কারণেই চাষিদের কথা ভেবে এ রাজ্যের পাশাপাশি বাইরেও আমের বাজার ধরার চেষ্টা চলছে বলে উদ্যান পালন দফতর জানিয়েছে। কলকাতার শহিদ মিনার, আলিপুর, শিলিগুড়ি-সহ মালদহের রামকেলি মেলাতেও বিক্রি ও প্রদর্শনী হয়েছে। এ বার দিল্লি। রাজধানীতে সব রাজ্যের মানুষ থাকেন। সেখানে দক্ষিণ ভারতের আমের চাহিদা রয়েছে। মালদহের আম ওঠে সবার শেষে। তাই দিল্লিতে প্রচার ও প্রদর্শনী করে মালদহের আমে আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মালদহ আম ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘‘প্রচুর ফলন হলেও যে দরে আম বিক্রি হচ্ছে তাতে চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। যোগানের তুলনায় চাহিদা না থাকায় প্রচুর আম পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাজারগুলিতে গেলেই প্রচুর পচা আম পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। সরকারি তরফে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে চাষিদের পথে বসতে হবে।’’
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘দিল্লির আম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মালদহের ব্যবসায়ীদের যোগসূত্রের কাজ করবেন উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিকেরা। এ ছাড়া মালদহে চাষিদের কাছ থেকে খুব শীঘ্রই ১২ টাকা কিলোগ্রাম দরে আম কিনে তা বাজারে বিক্রি করা হবে। মালদহ স্টেশনেও আউটলেট করে আম বিক্রি করা হবে।’’