শোকস্তব্ধ বিপুলের বাবা নীরেন রায়, (ইনসেটে, বিপুল রায়) )। ছবি: নারায়ণ দে।
পাঁচ দিন আগেই বাবা নীরেনবাবুকে ফোন করেছিলেন হাবিলদার বিপুল রায়। বলেছিলেন, ‘‘লাদাখ সীমান্তে গোলমাল চলছে। মিটে গেলে ছুটি পাব। বৌ-বাচ্চাকে নিয়ে বাড়ি যাব।’’
মঙ্গলবার গোলমাল বাড়তে থাকে। সকাল থেকেই তাই উৎকণ্ঠায় ছিলেন ৬৬ বছরের বাবা। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে টিভি চ্যানেলে খুঁজছিলেন, যদি কোনও খবর মেলে। ছেলেকে সন্ধ্যার পরে অনেক বারের চেষ্টাতেও ফোনে পাননি। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ টিভি দেখছিলেন বৃদ্ধ। এমন সময়ে মোবাইল বেজে ওঠে। অন্য প্রান্তে এক জন নিজেকে ভারতীয় সেনার এক কর্তা বলে পরিচয় দিয়ে জানান, বিপুল আর নেই। অসুস্থ হওয়ায় বিপুলের মা-কে এখনও সেই খবর দেওয়া হয়নি। বুধবার সরকারি বিবৃতিতে নিহতদের তালিকায় ৩৫ বছরের বিপুলের নাম প্রকাশ করা হয়।
আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের বিন্দিপাড়া গ্রামের রায় বাড়িতে বুধবার সকাল থেকেই ভিড় উপচে পড়ে। বিজেপির জেলা সভাপতি থেকে তৃণমূল বিধায়ক, সকলেই বসে আছেন নীরেনবাবুর উঠোনে। সবুজ মাস্ক হাতে ধরে বসে আছেন নীরেনবাবু। জল শুকিয়ে গিয়েছে চোখের কোলে। মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। পড়শিরাও ভেঙে পড়েছেন সেই উঠোনে।
আরও পড়ুন: ‘‘হাতে মাত্র দু’মিনিট, মা-বাবাকে বলিস, এখন আর ফোন করতে পারব না’’
আরও পড়ুন: গলওয়ানে নিহত রাজ্যের দুই, আর্থিক সাহায্য ও চাকরির ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
নীরেনবাবুর কাছ থেকেই জানা গেল, আর আট মাস পরে অবসর নেবেন বলে ভেবে রেখেছিলেন বিপুল। এখন তিনি কর্মসূত্রে থাকতেন মেরঠে। অবসরের পরে বৌ রুম্পা আর পাঁচ বছরের কন্যা তামান্নাকে নিয়ে আলিপুরদুয়ারে নিজের বাড়িতে ফিরে আসবেন বলে ঠিক করে রেখেছিলেন। কিছুটা জমিও কিনেছিলেন সম্প্রতি। ঠিক ছিল, অবসরের পরে তারই এক কোণে দোকান তৈরি করবেন। আর কিছু টাকায় ছাদ ঢালাই করে পাকা ঘরও তুলবেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীরেনবাবু বললেন, ‘‘কী ভেবেছিল, আর কী ঘটে গেল!’’
যদিও এখনও মেরঠেই রয়েছেন বিপুলের স্ত্রী-কন্যা, সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, বিন্দিপাড়ার বাড়িতেই বৃহস্পতিবার আসবে বিপুলের দেহ। বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী জানান, গ্রামের মাঠে হেলিকপ্টার নামানোর ব্যবস্থা করা হবে। মাঠে একটি মঞ্চ বাঁধা হবে, সেখানে নিহত সেনাকে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন সবাই। এই কথা শুনে ফের ডুকরে ওঠেন বিপুলের দিদি সুজাতা।