নয়া মোড় সবং মামলায়। চার্জশিট পেশের পাঁচ মাসের মাথায় ছাত্র পরিষদ কর্মী খুনের এই ঘটনায় ফের তদন্ত করতে চলেছে পুলিশ। এ জন্য পুলিশের আবেদন মেদিনীপুর আদালতে মঞ্জুরও হয়েছে। ২১ মার্চের মধ্যে এই পর্বের তদন্ত রিপোর্ট জমার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
চার্জশিট জমা পড়ার পরে ফের তদন্ত করতে চাওয়ার নজির খুব একটা নেই বলে আইনজাবীদের একাংশ জানিয়েছেন। তার উপর সবং মামলায় একাধিক বার আদালতে ভর্ৎসিত হয়েছে পুলিশ। তদন্তকারী অফিসার (আইও)-কে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। বিরোধীরাও গোড়া থেকেই এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব। জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর অভিযুক্তদের বাঁচাতে মামলা সাজাচ্ছেন অভিযোগে লাগাতার আন্দোলনও করেছিল কংগ্রেস। ফের সেই মামলার তদন্ত করতে চাওয়ায় প্রশ্নের মুখে সেই পুলিশের ভূমিকাই। কংগ্রেসের আশঙ্কা, নতুন করে দলের কাউকে মামলায় জড়ানো হতে পারে।
ভোটের মুখে জেলা পুলিশ সুপারের পদ থেকে সরছেন ভারতী ঘোষ। তার আগে কংগ্রেস কর্মীদের অপদস্থ করার চেষ্টা হচ্ছে বলে সরব হয়েছেন সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন, “পুলিশের এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক অভিসন্ধিমূলক। কংগ্রেসের কিছু নেতা-নেত্রীকে অপদস্থ করার চক্রান্ত হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর কন্যাসম ভারতী ঘোষের নির্দেশেই তো আইও পুনর্তদন্তের আবেদন জানিয়েছেন।’’
গত ৭ অগস্ট সবং সজনীকান্ত কলেজ চত্বরে সিপি কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ জানাকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। ঘটনার পরপরই তিন জন টিএমসিপি ও চার জন সিপি কর্মী গ্রেফতার হন। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত ঘোষণাই করে দেন— ঘটনার পিছনে রয়েছে সিপি-র কোন্দল। পুলিশ সুপার ভারতীদেবীও সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রীর ‘তত্ত্ব’ প্রতিষ্ঠায় উঠেপড়ে লাগেন। দাবি করেন, তদন্তে প্রায় স্পষ্ট যে সিপি-র ঘরোয়া অশান্তির জেরেই খুন হন কৃষ্ণপ্রসাদ।
ঘটনার ৪১ দিনের মাথায় মেদিনীপুর আদালতে যে চার্জশিট জমা পড়ে সেখানেও টিএমসিপি কর্মীদের অনেকটা রেহাই দেওয়া হয়। চার্জশিটে নাম থাকা ২১ জনের মধ্যে ১৯ জনই ছিল সিপি-র। মাত্র ২ জন টিএমসিপি-র। সিপি-র ১৮ জনের বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারা দেওয়া হলেও টিএমসিপি-র ২ জনের বিরুদ্ধে ছিল জামিন যোগ্য ধারা। মামলায় ধৃত টিএমসিপি কর্মী অসীম মাইতির নাম তো চার্জশিট থেকে বাদ-ই দেওয়া হয়। তবে ধৃত ৭ জনের কেউই এখনও জামিন পায়নি।
পুনর্তদন্তে পুলিশের যুক্তিটা কী?পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ ফোন ধরেননি। জবাব দেননি এসএমএসের। তবে মামলার আইও বিশ্বজিত্ মণ্ডল গত ৬ ফেব্রুয়ারি মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে জমা দেওয়া আবেদনে জানান, ৫ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় কয়েকজন সবং থানায় এসে নিজেদের ছাত্র পরিষদ (সিপি) কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ জানা খুনের প্রত্যক্ষদর্শী বলে পরিচয় দেন। ঘটনার সময়
ভয়ে চুপ করে থাকা সবংয়ের ওই বাসিন্দারা এখন সব বলতে চান। আবেদনপত্রে আইও জানান, ‘কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী কিছু বলতে চান। তাই পুনরায় তদন্তের আবেদন।’
এখন যদিও সবটাই অস্বীকার করছেন আইও বিশ্বজিৎবাবু। তাঁর সই করা আবেদনপত্র আদালতে জমা পড়লেও এ দিন বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, ‘‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তা ছাড়া, আমি এখন সবংয়ে নেই।’’ কিছু দিন আগে কেশিয়াড়ি থানায় বদলি হয়ে গিয়েছেন তিনি। তবে খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “সবংয়ে ছাত্র খুনের মামলায় নতুন করে কয়েকজন তথ্য জানাতে চান। সেই কারণে ফের তদন্তের প্রয়োজন হয়েছে।’’
পুনর্তদন্তের আবেদন গত ৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে মঞ্জুর হয়ে গেলেও বিষয়টি অত্যন্ত গোপন ছিল। ফের তদন্তের কথা জানতেন না অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীও। ঘটনায় ধৃত সিপি কর্মী সুদীপ পাত্রের পরীক্ষায় বসার আবেদন নিয়ে শুনানি ছিল মঙ্গলবার। তখনই ‘কেস রেকর্ড’ ঘাঁটতে গিয়ে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী হরিসাধন ভট্টাচার্যের নজরে বিষয়টি আসে। হরিসাধনবাবু বলেন, “যে ভাবে গোপনে আবেদন জানানো হয়েছে, তাতেই বোঝা যাচ্ছে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুলিশ আবার তদন্ত করতে চাইছে।”
পুলিশের পুনর্তদন্তে খুব একটা আস্থা রাখছে না নিহতের পরিবারও। কৃষ্ণপ্রসাদের দাদা হরিপদ জানা বলেন, “ভাইয়ের মৃত্যুর ছ’মাস পরেও পুলিশ জানাতে পারেনি প্রকৃত খুনি কে। এতদিন কী তদন্ত হল সেটাই বুঝিনি। আবার তদন্ত হলে খুনি ধরা পড়বে কি না সংশয় আছে।”