ধাক্কা ফল-সব্জি রফতানিতেও

বিদেশের মাটিতে কদর পাচ্ছে এ রাজ্যের সব্জি আর ফল। বাড়ছে রফতানির বাজারও। সেই বাজারই এ বার বিপর্যস্ত নোট বাতিলের জেরে। এর জন্য রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি কয়েক কোটি টাকা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন এ রাজ্যের সব্জি ও ফল রফতানিকারীরা।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৯
Share:

বিদেশের মাটিতে কদর পাচ্ছে এ রাজ্যের সব্জি আর ফল। বাড়ছে রফতানির বাজারও। সেই বাজারই এ বার বিপর্যস্ত নোট বাতিলের জেরে। এর জন্য রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি কয়েক কোটি টাকা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন এ রাজ্যের সব্জি ও ফল রফতানিকারীরা।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৮ কোটি টাকার ফল-সব্জি রফতানি হয় ইউরোপ, আরব-সহ বিভিন্ন দেশে। কপি, মুলো, শিম, পটল, ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙে, কাকরোল, লাউ, কচু, পেঁপের মতো সব্জির পাশাপাশি আম, কলা, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচু বাক্সবন্দি হয়ে চলে যায় বিদেশে। পরিমাণটা প্রায় ৫ লক্ষ কেজি। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (যেখানে বিদেশে রফতানি করা পণ্যের মান নির্ধারণ হয়) জানিয়েছে, এ দেশ থেকে বাইরে রফতানি হওয়া ফল ও সব্জির মানের বিচারে পশ্চিমবঙ্গই সেরা। সেই কারণে বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধি, রফতানিকারী ও কৃষি বিজ্ঞানীরা মাসখানেক আগেই কলকাতায় এসে কৃষক থেকে শুরু করে রফতানিকারীদের সঙ্গে কথা বলে সব কিছু দেখেশুনে গিয়েছেন।

এ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, হুগলি, বধর্মানের মতো জেলার সাড়ে ৫ হাজার চাষির কাছ থেকে সরাসরি সব্জি ও ফল কিনে নেন ভেন্ডারেরা। এর পর ভেন্ডাররাই সেগুলি ‘ইনটগ্রেটেড প্যাক হাউসে’ নিয়ে আসেন। সেখানে দক্ষ কর্মীরা সেই ফল-সব্জি বাছাই, পরিচর্যা করে বাক্সবন্দি করেন। মান দেখে নেওয়া হয় পরীক্ষাগারেও। তার পর ফল-সব্জি চলে যায় বিদেশে।

Advertisement

পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিলের পর এই গোটা ব্যবস্থাটাই আপাতত ভেঙে পড়েছে। এ রাজ্যের ১৫টি রফতানি সংস্থার সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক মৃণাল সিংহ বলেন, ‘‘কী যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা বলে বোঝানো যাবে না। সব্জি ও ফল কেনার ক্ষেত্রে গোটা ব্যাপারটাই হয় নগদে। যা কিছু নগদ টাকা ছিল, তা দিয়ে এ ক’দিন সামাল দেওয়া গিয়েছে। কিন্তু গত দু’দিন হল, আর ১০০ টাকার নোট দিয়ে মাল কেনা যাচ্ছে না।’’

ভেন্ডারদের কথায়, মাঠের চাষির কাছ থেকে সরাসরি নিতে হয় বলে কেনাকাটাই হয় নগদ টাকায়। কিন্তু ৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিল হয়ে যাওয়ার পর চাষিদের কাছ থেকে খুচরো টাকায় সরাসরি মাল কিনতে পারছেন না তাঁরা। গৌরহরি মাঝি নামে এক ভেন্ডারের কথায়, ‘‘পুরোনো ৫০০, ১০০০ কিংবা নতুন ২ হাজার টাকার নোট নিচ্ছেন না চাষিরা। ১০০ টাকা জোগাড় করে এ ক’দিন চলেছে। আর কেনাকাটা করা যাচ্ছে না। চাষিরাও বা কী করবেন!’’

সমস্যাটা হয়েছে আরও একটি জায়গায়। বর্ধমানের জামালপুরের চাষি শঙ্কর মণ্ডল যেমন এ দিন বলেন, ‘‘আমার ব্যাঙ্কে কোনও অ্যাকাউন্টই নেই।’’ শুধু শঙ্করই নন, অনেক চাষিরই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট নেই। ফলে নগদে কেনাবেচা ছাড়া সিংহভাগ চাষির আর উপায়ও নেই। আবার যাঁদের ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাঁরাও চেক-এ ‘পেমেন্ট’ নিতে চাইছেন না। যেমন উত্তর ২৪ পরগনার মছলন্দপুরের কৃষক রবিউল ইসলাম। রবিউলের কথায়, ‘‘মাল বেচে টাকা দিয়ে আমরা সংসার চালাই। এর পরেই রবিশস্যের চাষ শুরু হবে। নগদ টাকা ছাড়া বীজটুকুও কেনা যাচ্ছে না। ব্যাঙ্কে টাকা জমিয়ে কী করব? বাধ্য হয়ে হাটে বাজারে যতটুকু সব্জি বিক্রি হয়, সেটাই করছি।’’

রয়েছে শ্রমিকদের সমস্যাও। সব্জি ও ফল প্যাকহাউসে আসার পরে তা ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজটা করেন শ্রমিকরাই। তাঁদের ৩০০ টাকা রোজ হিসেবে দিতে হয়। সেখানেও খুচরো নিয়ে সমস্যা। তপন সরকার নামে এক রফতানিকারীর কথায়, ‘‘চাষিদের জন্য ভেন্ডারেরা আমাদের কাছে নগদ টাকা চাইছেন আবার প্যাকহাউসের শ্রমিকেরাও নগদে টাকা না দিলে কাজ করতে চাইছেন না। সব মিলিয়ে রফতানিই বন্ধ রাখতে হয়েছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কে জানে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement