প্রতীকী ছবি।
এত দিন একটা রিপোর্ট লিখে পাঠিয়ে দিলেই স্কুল পরিদর্শনের দায়দায়িত্ব মোটামুটি শেষ হয়ে যেত। তাতে স্কুলে ছবিটা কিছুটা হয়তো পরিষ্কার হত, অধরা থেকে যেত অনেকটাই।
এ বার সেই ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাচ্ছে রাজ্য সরকার। আর শুধু লিখিত রিপোর্ট দিলে চলবে না। পরিদর্শন শেষ করে লিখিত রিপোর্টের সঙ্গে সঙ্গে স্কুলের বিভিন্ন রকমের ছবিও পাঠাতে হবে। রাজ্যের সব জেলাশাসককে এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সর্বশিক্ষা মিশন। ছবি পাঠাতে হবে মূলত শ্রেণিকক্ষ, শৌচাগার-সহ পরিকাঠামোর।
স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কমিটি গড়ার নির্দেশ আগেই দিয়েছিল স্কুলশিক্ষা দফতর। এ বার রাজ্যের সব স্কুলের পরিকাঠামোগত পরিস্থিতি জানতে ছবি তুলে পাঠানোর বিজ্ঞপ্তি দিল সর্বশিক্ষা মিশন। জেলায় জেলায় সেই কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে।
কী কী ছবি না-পাঠালেই নয়, সেটা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে। বলা হয়েছে, আপাতত সাত ধরনের ছবি তুলতে হবে। ১) স্কুলভবনের সামনে থেকে এবং কাছ থেকে তুলতে হবে দু’টি ছবি। ২) দিতে হবে শ্রেণিকক্ষ, পাঠাগার, কম্পিউটার কক্ষ এবং পরীক্ষাগারের ছবি। ৩) ছাত্র ও ছাত্রীদের পৃথক শৌচালয়ের ছবিও চাই। ৪) পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং হাত ধোয়ার সাবান আছে কি না, ছবি দিয়ে দেখাতে হবে। ৫) মিড-ডে মিলের জন্য রান্নাঘরের ছবি দিতে হবে। ৬) খাওয়ার ঘরের ছবিও লাগবে। ৭) সীমানা-পাঁচিলের ছবি আবশ্যিক।
২০০৯ সালে শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী প্রতিটি স্কুলকে বেশ কিছু নিয়ম মানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ২০১২-য় রাজ্য সরকার কিছু বিধি তৈরি করে। তাতে জানানো হয়, সব রকম আবহাওয়া মানিয়ে নেওয়ার মতো শ্রেণিকক্ষ থাকা যেমন বাধ্যতামূলক, তেমনই মিড-ডে মিলের জন্য পৃথক রান্নাঘর আর খাওয়ার ঘর থাকতে হবে। অথচ ২০১৬-’১৭ সালের সমীক্ষায় দেখা যায়, অনেক স্কুলই এই নির্দেশ মানছে না। সীমানা-পাঁচিল বা পরিস্রুত পানীয় জলের কোনও বন্দোবস্তই নেই। তাই ফের এই বিষয়গুলি ঠিক করতে উদ্যোগী হয় দফতর।
গত অক্টোবরে পড়ুয়াদের নিরাপত্তার জন্য ১৮ দফা নির্দেশ দেয় স্কুলশিক্ষা দফতর। সিসি ক্যামেরা থেকে শুরু করে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বিকাশ ভবনের এক কর্তা জানান, এ বার শুধু লিখিত রিপোর্ট নয়, ছবির উপরে ভরসা রাখতে চাইছেন তাঁরা। এমনকী স্কুলের নাম আর লোগো-সহ ছবিও পাঠাতে বলা হয়েছে। এর ফলে সব স্কুলের সার্বিক পরিস্থিতি ফুটে উঠবে। পরিকাঠামো উন্নয়নের খাতে বরাদ্দ টাকা যথাযথ ভাবে খরচ করা হচ্ছে কি না, ওই সব ছবি থেকে তার প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে ওয়েবসাইটে ছবি-সহ প্রতিটি স্কুলের নাম এবং সবিস্তার তথ্য রাখার উদ্যোগও চলছে।
‘‘এটা অবশ্যই ভাল কাজ। তবে পরিদর্শকদের পাঠানো ছবি দেখে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করলে তবেই ভাল ফল পাওয়া যাবে,’’ বলেন বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির কর্মকর্তা স্বপন মণ্ডল।