ফাইল চিত্র।
রাজ্য সরকারের কোনও দফতর এখন থেকে নিজেদের মতো করে লোকসভার প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে সরাসরি পাঠিয়ে দিতে পারবে না। ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’-এর অনুমোদন নিয়ে তবেই লোকসভা থেকে আসা যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর পাঠানো যাবে বলে নির্দেশ জারি করেছে রাজ্য সরকার। এবং পুরো কাজটি করতে হবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই। সম্প্রতি সব দফতরের সচিবদের কাছে এই মর্মে চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী।
মুখ্যসচিবের চিঠিতে জানানো হয়েছে, ২০১৯ সালে এক বার এই বিষয়ে দফতরগুলিকে লিখিত ভাবে সতর্ক করা সত্ত্বেও সব ক্ষেত্রে যে লোকসভার পাঠানো প্রশ্নের উত্তর সময়মতো তৈরি হচ্ছে না, তা লক্ষ্য করেছে নবান্ন। সে-কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নবান্নের নির্দেশ, লোকসভার পাঠানো প্রশ্নের জবাব নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই জরুরি ভিত্তিতে তৈরি করে ফেলতে হবে। এবং সময় থাকতে সেই খসড়া উত্তর পাঠাতে হবে মুখ্যসচিবের কাছে। তাঁর অনুমোদন পেলে তবেই তা পাঠাতে হবে লোকসভায়। কোনও কোনও বিষয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকেও সেই অনুমোদন নেওয়া হতে পারে বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধানসভা ভোটের আগে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে যে-টানাপড়েন ছিল, মমতা তৃতীয় বারের জন্য বিপুল ভাবে ক্ষমতায় আসার পরে তা আরও বেড়েছে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে রাজ্যের উপরে চাপ ক্রমেই বাড়ছে বলে মনে করছে নবান্নের একাংশ। গোটা বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ বলে জানালেও সেটাকে হালকা ভাবে
নিচ্ছে না রাজ্য। ফলে নানান ‘স্পর্শকাতর’ বিষয়ের জবাব যাতে কোনও ভাবে কেন্দ্রের হাতিয়ার হয়ে উঠতে না-পারে, সেই বিষয়ে রাজ্যকেও বাড়তি সতর্ক থাকতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন নবান্নের কর্তারা।
প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা, লোকসভার অধিবেশনে কোনও সাংসদ যে-বিষয়ে প্রশ্ন করবেন, তার উত্তর সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে জানতে চাওয়া হয়। লোকসভার পাঠানো
নির্দিষ্ট বয়ান অনুযায়ী প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে, মন্ত্রী ও সচিবের অনুমোদন নিয়ে আগে তা পাঠানো হত লোকসভায়। কিন্তু এখন দফতরের মন্ত্রী বা সচিবের উপরে এই দায়িত্ব পুরোপুরি কেন ছাড়া হচ্ছে না, আধিকারিকদের একাংশ সেই প্রশ্ন তুলছেন। যদিও গোটা বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি মত ঘোরাফেরা করছে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, প্রথমত, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য নিয়ে রাজ্যের অবস্থান অনেক সময়েই মেলে না। কেন্দ্র কোনও বিশেষ বিষয়ে যে-তথ্য দিয়ে থাকে, তা মানতে চায় না রাজ্য। বরং রাজ্য তার পাল্টা তথ্য তুলে ধরে। গত বিধানসভা ভোটের আগেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যের অগ্রগতি সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় তথ্যের বিরোধিতা করেছিল রাজ্য সরকার। কেন্দ্রের তথ্যের সত্যতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই।
দ্বিতীয়ত, বর্তমান পরিস্থিতিতে লোকসভার মঞ্চকে কেন্দ্র-বিরোধিতার প্রশ্নে আরও জোরালো ভাবে ব্যবহার করার ইঙ্গিত দিচ্ছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘বঞ্চনা’র অভিযোগের পাশাপাশি রাজ্যের ‘সাফল্য’ ছত্রে ছত্রে তুলে ধরতে চাইছে দল। এমনকি, সাফল্যের প্রশ্নে মোদী সরকারের সঙ্গে সরাসরি তুল্যমূল্য বিশ্লেষণও সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে টেনে আনতে চাইছে মমতার সরকার। ফলে লোকসভায় রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের তরফে যে-উত্তর যাবে, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গোচরে থাকা জরুরি বলে মনে করছে শীর্ষ মহল। সমন্বয় বা তথ্যগত বিভ্রান্তি এড়াতে তাই কার্যত এক-জানলা পদ্ধতি মানতে বলা হচ্ছে সব দফতরকেই।