ফাইল চিত্র।
রাজ্য সরকারের নানান প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পেতে গন্তব্য এখন একটাই— ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির শিবির। ওই সব শিবির ছাড়া অন্য কোথাও থেকে কোনও প্রকল্পের ফর্ম বা আবেদনপত্র বিলি বা সংগ্রহ করা যাবে না। মঙ্গলবার প্রশাসনিক কর্তা ও জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে নবান্নের শীর্ষ মহল এই বার্তাই দিয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। পর্যবেক্ষক শিবিরের ধারণা, রাজনৈতিক প্রভাব থেকে দুয়ারে সরকার কর্মসূচিকে আড়াল করতেই এমন পদক্ষেপ।
প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, কয়েকটি জেলায় আবেদনপত্র তৈরি করে তা বিলি করার মতো তথ্য পাচ্ছেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। এর পিছনে স্থানীয় স্তরে রাজনৈতিক প্রভাব একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এমন রাজনৈতিক গতিবিধি হয়ে থাকলে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। শিবিরে গিয়ে উপভোক্তারা তাঁদের চাহিদামতো কাজ করবেন। তাঁদের উপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবেন শিবির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অফিসারেরা। ফর্ম সংগ্রহ থেকে তা পূরণ করা, এমনকি কী ধরনের প্রামাণ্য তথ্য বা নথি লাগবে, সবটাই হবে আধিকারিকদের তত্ত্বাবধানে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এ দিন বৈঠকে মুখ্যসচিবকে ফোন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ভিত্তিতেই বৈঠক এগিয়ে নিয়ে যান মুখ্যসচিব।
আধিকারিক মহলের ব্যাখ্যা, এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন এলাকায় আবেদনপত্র তৈরি করে টাকার বিনিময়ে সেগুলি বিক্রির প্রবণতা দেখা যায়। ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি চলে। সেই কারণে সব জেলাশাসককে মাইকে প্রচার করতে বলা হয়েছে, যাতে প্রত্যেকে শিবিরে গিয়ে নিখরচায় সেই কাজ করাতে পারেন। এক আধিকারিক বলেন, “এক জন প্রার্থী যাতে একসঙ্গে অনেক আবেদনপত্র জমা না-দেন, সেই ব্যাপারেও সতর্ক করা হবে।”
গত বারেও ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির পরিচালনার বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে রাখতে চেয়েছিল রাজ্য। সেই জন্য পঞ্চায়েত, পুরসভার মতো জায়গায় শিবির করতে নিষেধ করা হয়েছিল। এ বারেও সেই নির্দেশ বহাল থাকছে বলে আধিকারিক মহলের খবর। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে বন্যাকবলিত এলাকাগুলি নিয়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, বৈঠকে স্থির হয়েছে, যে-সব এলাকা এখনও জলমগ্ন, সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে দুয়ারে সরকারের শিবির করা হবে। “জলমগ্ন পরিস্থিতিতে শিবির করা এবং মানুষের পক্ষে সেখানে যাওয়া খুব সমস্যার। তাই এই পদক্ষেপ। তবে সেই সব এলাকায় শিবির দেরিতে শুরু হলেও প্রত্যেকে যাতে আবেদন করার সুযোগ পান, তা নিশ্চিত করা হবে,” বলেন এক অফিসার।
এ বারের কর্মসূচিতে নতুন প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। ওই প্রকল্পে আবেদনকারীদের যাতে কোনও সমস্যা না-হয়, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। প্রকল্পটির ফর্ম শুধু ইংরেজিতে ছাপা হয়েছিল। তবে উপভোক্তাদের কথা ভেবে এ দিন বাংলাতেও তা ছাপার নির্দেশ দিয়েছে।