আদালতে সশরীর হাজিরার দরকার নেই। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্য দিলেই হবে। শুধু জেলে বন্দি, হাইপ্রোফাইল অভিযুক্তদের নয়, এই সুবিধে সরকার পক্ষের সাক্ষীদেরও দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সাক্ষীরা হাজিরা দিতে না-পারায় অনেক ক্ষেত্রে বিচার যে-ভাবে বিলম্বিত হয়, এই ব্যবস্থায় তার অনেকটা সুরাহা হবে বলে মনে করছে উচ্চ আদালত।
খুন, ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, জালিয়াতির মতো অজস্র অপরাধের মামলা চলছে জেলা আদালতে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই মামলার নিষ্পত্তি হতে দীর্ঘ সময় লাগছে। সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সরকার পক্ষের সাক্ষীদের নির্ধারিত দিনে আদালতে উপস্থিত হতে না-পারাটা এর অন্যতম কারণ। তাই জেলা আদালতে ফৌজদারি মামলায় সরকার পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রয়োজনে ভিডিও-সম্মেলনের মাধ্যমে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। কয়েক দিন আগে তাঁর আদালতে একটি ফৌজদারি মামলার শুনানির সময়ে বিচারপতি বাগচী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায়কে এই নির্দেশ দেন।
রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, অনেক ক্ষেত্রে সরকার পক্ষের সাক্ষীদের মধ্যে তদন্তকারী, ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসক, বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ বা সাক্ষীর গোপন জবানবন্দি নেওয়া ম্যাজিস্ট্রেট সাক্ষ্য দিতে নির্দিষ্ট দিনে আদালতে হাজির হতে পারেন না। তাঁরা যে ইচ্ছে করে গরহাজির থাকছেন, তা নয়। আসলে ওই সব সাক্ষী যে-জেলায় থাকাকালীন মামলা রুজু হয়েছিল, বিচারের সময়ে তাঁরা হয়তো সেখান থেকে বদলি হয়ে গিয়েছেন। সাক্ষ্যদানের সমন হয়তো তাঁর কাছে সময়মতো পৌঁছয়নি অথবা তিনি বিশেষ সরকারি কাজে আটকে পড়ায় আদালতে যেতে পারেননি।
এই ধরনের জটিলতা কাটিয়ে বিচার ত্বরান্বিত করার জন্য বিচারপতি বাগচী ভিডিও-সম্মেলনে সাক্ষ্যের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান পিপি। তিনি জানান, রাজ্যের প্রতিটি জেলা আদালতে ভিডিও-সম্মেলনের ব্যবস্থা আছে। সাক্ষ্যের তারিখ আগে থেকেই সরকারি সাক্ষীদের জানিয়ে দেওয়া হয়। সরকার পক্ষের সাক্ষী যেখানেই বদলি হোন, তিনি সেই জেলা আদালতের ভিডিও-সম্মেলন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং তাঁর সাহায্য নিয়ে দূর থেকেই সাক্ষ্য দেবেন। বিচারক ও আইনজীবীরা কথা বলতে পারবেন সাক্ষীর সঙ্গে। সরকার পক্ষের কোনও সাক্ষী চাকরি থেকে অবসর নিয়ে যেখানে থাকছেন, সেখানকার জেলা আদালতে গিয়েও একই ভাবে সাক্ষ্য দিতে পারবেন।
পিপি জানান, বর্তমানে শুধু জেলা আদালতগুলিতেই এই ব্যবস্থা রয়েছে। আগামী দিনে বিভিন্ন মহকুমা আদালতেও যাতে এই সুবিধে পাওয়া যায়, তার বন্দোবস্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের।