অবরোধ: বসিরহাট স্টেশনের কাছে টাকি রোডে। ছবি: নির্মল বসু।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দোকানপাট খুলতে শুরু করেছিল বসিরহাট শহরে। পথের ধারে বাজারও বসে বেশ কিছু জায়গায়। বাদুড়িয়া, স্বরূপনগর থেকেও নতুন করে গোলমালের খবর ছিল না।
কিন্তু বেলা তিনটের পরেই আচমকা পাল্টে গেল পরিস্থিতি। ফের হাজার হাজার লোক নেমে পড়ল বসিরহাটের রাস্তায়। পুলিশকে লক্ষ করে চলল বোমা-গুলি। রাস্তায় জ্বলল টায়ার। ভাঙচুর হলো দোকানপাট। আগুন লাগানো হলো মোটর বাইক, গাড়িতে।
বসিরহাটের পরিস্থিতি সামলাতে বৃহস্পতিবার সকালে আরও ৪ কোম্পানি আধাসেনা পাঠাতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু পরিবেশ শান্ত দেখে রাজ্য তা নিতে চায়নি। দুপুরের পরে ফের গোলমাল শুরু হওয়ায় তারা সিদ্ধান্ত পাল্টায়। সন্ধ্যায় বাহিনী আনার জন্য নতুন করে চিঠি পাঠানো হয় কেন্দ্রকে।
পাশাপাশি এ দিনই দু’টি ধর্মীয় সংগঠন ‘হিন্দু সংহতি মঞ্চ’ এবং ‘মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (এমআইএম)-এর কার্যকলাপের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সরকার ওই দুই সংগঠনের নেতা তপন ঘোষ এবং আসাদুদ্দিন ওয়াইসির বক্তৃতা যথেষ্ট প্ররোচনামূলক বলেই মনে করা হচ্ছে। সে কারণেই ওই সংগঠন দু’টির কার্যকলাপ, সভা-সমাবেশ, মিছিলের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
আরও পড়ুন:সংঘাতের পথ ছেড়ে নরম কেশরীনাথ
ফের কেন তপ্ত হয়ে উঠল বসিরহাট? বিক্ষোভকারীদের অভিযোগের তির বসিরহাট দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাসের দিকে। তাঁদের বক্তব্য, সোমবার যাদের হাত ধরে গোলমালের সূত্রপাত, সেই দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন দীপেন্দু। তাঁর নির্দেশে পুলিশ এ দিন বেছে বেছে সেই সব লোকেদেরই ধরেছে, গত তিন দিন ধরে যাঁরা আক্রান্ত। এই অভিযোগের সূত্র ধরে বিক্ষোভে স্লোগান ওঠে, ‘‘দীপেন্দু বিশ্বাসের বিচার চাই।’’ তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর চলে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। বসিরহাট শহরে বেশ কিছু তৃণমূল অফিসে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
দীপেন্দু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে বলেন, ‘‘সকালে দশ মিনিটের জন্য থানায় গিয়েছিলাম। আমার বিরুদ্ধে যা রটানো হচ্ছে, তা মিথ্যা। এ সব সত্যি প্রমাণিত হলে আমি বিধায়ক পদ ছেড়ে দেব।’’ দীপেন্দুর বক্তব্য, দলের নির্দেশে তিনি এলাকায় শান্তি ফেরানোর জন্য বিভিন্ন লোকের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। এর মাঝে কিছু লোক তাঁর বাড়ি আক্রমণ করে। পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝে সন্ধের দিকে র্যাফের গাড়িতে গোপনে তিনি এলাকা ছেড়ে চলে যান বলে জানাচ্ছে পুলিশের একটি সূত্রে খবর।
রাতের দিকে দীপেন্দুকে কলকাতায় ডেকে পাঠান তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। আপাতত বসিরহাটে দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অসিত মজুমদারকে। তিনি দলে দীপেন্দুর বিরোধী শিবিরের নেতা বলেই পরিচিত। যদিও দীপেন্দুর দাবি, দায়িত্ব বদলের খবর তাঁর জানা নেই। নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ স্তরেও কিছু রদবদল করা হবে।
গত কয়েক দিন দীপেন্দু ছিলেন বিদেশে। বুধবার সকালে ফেরেন। যান বসিরহাট থানায়। ফেরার পথে তাঁর গাড়ি ঘিরে কিছু লোক হেনস্তা করে বলে অভিযোগ। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ শহরের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ধরপাকড় শুরু করে। অভিযোগ, বেছে বেছে এক পক্ষকেই ধরা হচ্ছিল। ফলে নতুন করে আগুনে ঘি পড়ে। পুলিশ সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে এবং গোলমালের মূল মাথাকে ধরতে ব্যর্থ এই অভিযোগ ছিলই। এ দিন তার সঙ্গে যুক্ত হয় নিরীহ মানুষকে হেনস্তা করার অভিযোগ।
পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, বসিরহাট স্টেশনের কাছে পুলিশ, বিএসএফের গাড়ি ঘিরে ফেলে হাজার কয়েক লোক। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়েও পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা যায়নি। আধাসামরিক বাহিনীর ভূমিকা ছিল কার্যত দর্শকের। হতাশ এক পুলিশ কর্তা পরে বলেন, ‘‘সব কিছু শান্ত হয়ে আসছিল। কে যে নতুন করে ধরপাকড়ের নির্দেশ দিল!’’