বীরভূমে জলের তোড়ে তলিয়ে গেল ৪

টানা বৃষ্টিতে সেতু ছাপিয়ে গেল জলে। স্রোতে ভেসে গিয়ে বীরভূমে একই দিনে এক সাইকেল আরোহী এবং তিন স্কুলছাত্র তলিয়ে গেলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের তৎপরতায় বেঁচে গিয়েছেন আর এক ছাত্র। এ দিনই আবার জলের তোড়ে তারাপীঠে দ্বারকা নদের উপর সেতুটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৫ ০৩:১৮
Share:

টানা বৃষ্টিতে সেতু ছাপিয়ে গেল জলে। স্রোতে ভেসে গিয়ে বীরভূমে একই দিনে এক সাইকেল আরোহী এবং তিন স্কুলছাত্র তলিয়ে গেলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের তৎপরতায় বেঁচে গিয়েছেন আর এক ছাত্র। এ দিনই আবার জলের তোড়ে তারাপীঠে দ্বারকা নদের উপর সেতুটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত দু’দিন ধরে অতিবৃষ্টিতে জল উপচে পড়েছে লাভপুরের কুয়ে নদীতে। এ দিন ভেসে যায় ওই নদীর উপর থাকা সিউড়ি-কাটোয়া সড়কের লাঘাটা সেতু। শনিবার সকাল ৯টা নাগাদ স্থানীয় যাদবলাল হাইস্কুলের তিন স্কুলছাত্র বন্যা দেখতে ওই সেতুর কাছে গিয়েছিল। তখনই জলের তোড়ে তিনজন ভেসে যেতে শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দারা সৌমিক পাত্র নামে এক কিশোরকে উদ্ধার করতে পারলেও, এখনও নিখোঁজ প্রকাশ পাত্র এবং শুভদীপ পাত্র। তিন জনেই লাভপুরের বাসিন্দা। পরে লাভপুরের বাড়িতে বসে সৌমিক বলে, ‘‘আমরা সেতু ধরে পায়ে হেঁটে এগোচ্ছিলাম। হঠাৎ প্রবল স্রোতে পা হড়কে যায়। তারই মধ্যে পাক খেয়ে আমি সেতুর একটি স্তম্ভ ধরে ফেলি। কিন্তু প্রকাশ ও শুভদীপ তলিয়ে যায়!’’ লাভপুরের বিডিও জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস জানান, দুই ছাত্রের খোঁজে একটি স্পিড বোট ও নৌকা নামানো হয়েছে। কিন্তু, রাত পর্যন্ত কারও খোঁজ মেলেনি।

অন্য দিকে, গত বহস্পতিবার থেকে টানা বৃষ্টিতে খয়রাশোলে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে, হিংলো নদীর কজওয়ে ছাপিয়ে বইছিল জল। এ দিন সকালে ঝুঁকি নিয়ে তা পেরোতে গিয়েই জলে তলিয়ে যান লোটন দাস (৫০) নামে এক সাইকেল আরোহী। সন্ধ্যা পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি খয়রাশোলের রানিপাথরের ওই বাসিন্দার। তাঁর এক সঙ্গীও জলের তোড়ে কজওয়ে থেকে নদীতে ছিটকে পড়েছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের তৎপরতায় কোনও রকমে বেঁচে গিয়েছেন। এ দিন ওই সেতুতে দায়িত্বে থাকা সিভিক ভলান্টিয়ার গোপীনাথ পাল বলেন, ‘‘আমার নিষেধ অগ্রাহ্য করে ওই দু’জন সাইকেল নিয়ে এগিয়ে যান। ফুট ১৫ যেতে দু’জনেই জলের তোড়ে সেতু থেকে নদীতে ছিটকে পড়েন।’’

Advertisement

এ দিন দুপুরে আবার মাড়গ্রাম থানার মাদারতলা এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে দ্বারকা নদের বান দেখতে গিয়ে ভেসে যায় ৯ বছরের রাসুল শেখ। তার বাড়ি মাড়গ্রামের কুঠিপাড়ায়। তার আত্মীয়া মতিনা বিবি বলেন, ‘‘চার জন বন্ধু মিলে বান দেখতে গিয়েছিল। স্রোতে বন্ধুদের থেকে ছিটকে গিয়ে রাসুল নদীতে ভেসে যায়। এখনও তার খোঁজ মেলেনি।’’ রামপুরহাটের মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস জানান, দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে এলাকায় লোক পাঠানো হচ্ছে।

এ দিন তারাপীঠে জলের তোড়ে দ্বারকা নদের উপর থাকা সেতুটি আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপজ্জনক অবস্থায় থাকার জন্য বর্তমানে সেতুর উপর ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে তারাপীঠে আসা পর্যটকদের এ দিন দিনভর ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তাঁদের সেতু থেকে আধ কিলোমিটার দূরেই অটো বা অন্যান্য যানবাহন থেকে নেমে পড়ে হচ্ছে। শিলিগুড়ি থেকে আসা জয়ন্ত দাস, কলকাতার দেবাশিস দাসরা বলছেন, ‘‘পরিবারের সঙ্গে মালপত্র নিয়ে এ ভাবে আধ কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে তারাপীঠে পৌঁছনো খুবই ভোগান্তির।’’ তবে সেতু মেরামতের কাজ শুরু করেছে পূর্ত দফতর (সড়ক)। দফতরের জেলা নির্বাহী বাস্তুকার আসরাফ আলি বলেন, ‘‘রাতের মধ্যে মেরামতি হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement