মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় শপথ নিলেন চার বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী, কৃষ্ণ কল্যাণী, সুপ্তি পাণ্ডে এবং মধুপর্ণা ঠাকুর। শপথগ্রহণের সময় অনুপস্থিত রইল বিজেপির পরিষদীয় দল। তাদের দাবি, সংবিধান মেনে শপথ হচ্ছে না। তাই শপথগ্রহণের সময় থাকছে না তারা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও সেই দাবি উড়িয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, সংবিধান মেনেই শপথগ্রহণ হচ্ছে। এটা ভারত এবং বাংলার ইতিহাসে নজির হয়ে রইল বলেও জানিয়েছেন তিনি। সংবিধানে শপথগ্রহণ নিয়ে কী রয়েছে, তা বিধানসভায় পড়েও শোনান মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
মঙ্গলবার দুপুরে শপথ নিতে স্পিকার বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে অধিবেশন কক্ষে পৌঁছন বিধায়কেরা। প্রথমে শপথ নেন রায়গঞ্জের নতুন নির্বাচিত বিধায়ক কৃষ্ণ। এর পর হরিচাঁদ এবং গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে শপথ নেন রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি। হরিচাঁদ এবং গুরুচাঁদের নামে শপথ নেন বাগদার বিধায়ক মধুপর্ণাও। শপথের পর মুখ্যমন্ত্রীকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন তিনি। শেষে শপথ নেন মানিকতলার বিধায়ক সুপ্তি।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রেয়াত হোসেন সরকারের মতো মুকুটমণি, কৃষ্ণ, সুপ্তি এবং মধুপর্ণার শপথগ্রহণ নিয়েও রাজভবনের সঙ্গে টানাপড়েন শুরু হয় বিধানসভার। তার মাঝেই সোমবার, বিধানসভায় অধিবেশন শুরুর দিন স্পিকার জানিয়ে দেন, মঙ্গলবারই রীতি মেনে শপথ নেবেন নতুন চার বিধায়ক। বিধানসভা সূত্রে খবর, সোমবারও রাজভবন থেকে কোনও ইতিবাচক জবাব না-পাওয়ায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিরোধী দল বিজেপি দাবি করে, সংবিধান মেনে শপথগ্রহণ হচ্ছে না। সেই দাবি উড়িয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে, পাঁচটি ধারা মেনেই স্পিকার শপথগ্রহণ করিয়েছেন বিধায়কদের। মমতার কথায়, ‘‘পাঁচ ধারাকে হাতিয়ার করে স্পিকার শপথগ্রহণ করিয়েছেন। আমি সাত বারের সাংসদ। তিন বারের বিধায়ক। আমাদের সংবিধান যেমন রয়েছে, কনভেনশনও আছে। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে এই দুইয়ের মেলবন্ধনের নজির ভারতে রয়েছে।’’ এর পর জনাদেশের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মন্তব্য, লোকসভা ভোটে এনডিএ-র ৪৬ শতাংশ ভোট। ইন্ডিয়া ৫১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। মানুষের জনাদেশ স্পষ্ট। ভোটদাতাদের ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে সায়ন্তিকা এবং রেয়াতের শপথগ্রহণ নিয়ে যে জট তৈরি হয়েছিল, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বিধানসভায় জানিয়েছেন, ৪ জুন বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলঘোষণা হয়েছে। সায়ন্তিকা এবং রেয়াত বিধায়ক নির্বাচিত হন। ১৩ জুন বিধানসভা রাজভবনকে চিঠি পাঠিয়েছিল। ১৯ জুন রাজভবন থেকে একটি চিঠি আসে বিধানসভায়, যা শপথের বিষয়ে ছিল না। তিনি জানান, এর পরেই বিধানসভায় সংবিধান এবং কনভেনশনের মিশ্রণ হয়েছে।
সায়ন্তিকা এবং রেয়াতকে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের চিঠি পাঠানোর প্রসঙ্গও উঠে এসেছে মমতার ভাষণে। দুই বিধায়ককে চিঠি পাঠিয়ে রাজ্যপাল বোস জানিয়েছেন তাঁদের শপথ অসংবিধানিক ভাবে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুই বিধায়কের ৫০০ টাকা জরিমানা হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে চিঠিতে। এই প্রসঙ্গে মমতা নাম না-করে রাজ্যপালের উদ্দেশে বলেন, ‘‘লাইনে থেকে কথা বলুন। আপনি কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। আপনার বিরুদ্ধে কে জরিমানা দেবেন? ৫০০ টাকার ফাইন কেন চাই? টাকার খুব দরকার? না কি জলপানের জন্য টাকা লাগবে? আমরা জলপানের ব্যবস্থা করে দিতে পারি।’’ এর পরেই মমতা বলেন, ‘‘নবাগত সদস্যেরা কী শিখবেন? বিধানসভায় পা রেখেই পেনাল্টি? এটা গণতন্ত্রে চলতে পারে না। স্পিকার যা করবেন, মেনে নেব।’’
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, রাজ্যপালের কারণেই নতুন বিধায়কদের এক মাস সময় নষ্ট হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘দুই বিধায়ক রাজ্যপালকে চিঠি দিয়ে বিধানসভায় শপথ নিতে চেয়েছিলেন। দু’পা দূরে রাজভবন থেকে বিধানসভায় আসতে পারেননি? শুধু দিল্লি গিয়ে বসে রয়েছেন। স্পিকার রাজ্যপালকে ২৭ জুন আবার চিঠি দিয়ে আবেদন জানান। এক মাস এক দিন পর শপথ নিয়েছেন চার জন। তাঁদের একটা মাস নষ্ট হয়ে গেল। রাজ্যপাল ডেপুটি স্পিকারকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু ডেপুটি স্পিকার অক্ষমতা জানিয়ে স্পিকারকে শপথগ্রহণ করাতে বলেছেন। তাতে ভুল কোথায়? স্পিকারের উপস্থিতিতে ডেপুটি স্পিকার শপথগ্রহণ করাতে চাননি। অধিবেশনে রেকর্ডেড রয়েছে। সাধারণত রাজ্যপাল স্পিকারকে শপথের দায়িত্ব দেন।’’
সংবিধানে শপথগ্রহণ নিয়ে কী রয়েছে, তা বিধানসভায় পড়েও শোনান মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘আইন মেনেই চার বিধায়ক শপথ নিয়েছেন। এটা ভারত ও বাংলার ইতিহাসে নজির হয়ে রইল। একনায়কতন্ত্র করে আটকানো যাবে না।’’ স্পিকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মমতা। তিনি এ-ও জানান, অধিবেশন চালাতে তাঁকে অনেক চাপ নিতে হবে। স্পিকার পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিধানসভায় ৫০ শতাংশ মহিলা ও ৫০ শতাংশ পুরুষ সদস্য রয়েছেন। স্পিকার মুখ্যমন্ত্রীকে সমর্থন করেন। নিট নিয়ে ১৬৯ ধারায় তৃণমূলের পরিষদীয় দল নিন্দাপ্রস্তাব জমা দিল। প্রস্তাব পেশ করছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।