গোয়ালতোড় থেকে মাওবাদী সন্দেহে ধৃত সব্যসাচী গোস্বামী, টিপু সুলতান, অর্কদীপ গোস্বামী, সঞ্জীব মজুমদার।—ফাইল চিত্র।
মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত সন্দেহে জঙ্গল এলাকা থেকে চার জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল গোয়ালতোড় থানার পুলিশ।
কয়েক জন অপরিচিত লোক জড়ো হয়েছে, গোপন সূত্রে এই খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতে গোয়ালতোড়ের কঞ্জিমাকলিতে অভিযান চালায় পুলিশ। ফুটবল ময়দানের পাশের জঙ্গল থেকে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা হলেন সব্যসাচী গোস্বামী, সঞ্জীব মজুমদার, অর্কদীপ গোস্বামী ওরফে বিজয় ও টিপু সুলতান ওরফে স্বপন। তাঁদের কাছ থেকে কিছু লিফলেট উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘গোয়ালতোড়ে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে কিছু মাওবাদী নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’
ধৃত অর্কদীপ ওরফে বিজয় গোস্বামী কলকাতার পর্ণশ্রীর বাসিন্দা। তিনি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ডাক্তারির পড়ুয়া। অর্কদীপের বাবা–মা অবশ্য ছেলের মাওবাদী সম্পর্কের কথা স্বীকার করেননি। তাঁরা বলেন, বরাবরই বইমুখো অর্কদীপ চিকিৎসাশাস্ত্র ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বইপত্র প়়ড়তেন। বছর পঞ্চাশের সব্যসাচী গোস্বামী এর আগেও মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগে ৭ বছর জেল খেটেছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। ঘোলা থানার সোদপুরের বাসিন্দা সব্যসাচী এ দিন গড়বেতা আদালত চত্বরে নিজেকে লেখক ও সমাজকর্মী বলে দাবি করেছেন। যদিও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকায় নকশাল নেতা হিসাবে পরিচিত।
টিপু সুলতান ওরফে স্বপন কোর্টে দাবি করেছেন, তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। বর্তমানে কলকাতার সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। পুলিশের দাবি, বিশ্বভারতীতে পড়ার সময় নকশালপন্থী ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বীরভূমের শান্তিনিকেতনের পশ্চিম গুরুপল্লির বাসিন্দা টিপুর। অপর ধৃত সঞ্জীব মজুমদার ওরফে অসীম পেশায় শ্রমিক। তাঁর বাড়ি ঘোলা থানার আগরপাড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে একটি ঘটনায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছিল।
ধৃতদের বুধবার গড়বেতা আদালত চত্বরেই ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে থাকেন ধৃত টিপু সুলতান ও অর্কদীপ। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সামনে তাঁরা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির জন্য কাজের সূত্রেই গোয়ালতোড়ে এসেছিলাম। আমাদের কাছে কোনও অস্ত্র ছিল না। পুলিশ আমাদের মিথ্যা
মামলায় ফাঁসাতে চাইছে।’’ তাঁদের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ লকআপে মারধর ও হেনস্থা করা হয়েছে।’’ পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চায়নি।
গড়বেতা আদালতের এসিজেএম চন্দন প্রামাণিক ধৃতদের ৯ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। সরকারি আইনজীবী চিন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপের অভিযোগ আনা হয়েছে।’’