Kashi Kanta Maitra

বর্ণময় জীবনে দাঁড়ি, প্রয়াত কাশীকান্ত মৈত্র

সক্রিয় রাজনীতি থেকে সাম্প্রতিক কালে দূরে থাকলেও আইন জগতে সক্রিয় ছিলেন কাশীকান্তবাবু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২০ ০৪:১১
Share:

কাশীকান্ত মৈত্র

প্রয়াত হলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, ছ’বারের প্রাক্তন বিধায়ক ও বর্ষীয়ান আইনজীবী কাশীকান্ত মৈত্র। বয়স হয়েছিল ৯৫। বিধাননগরের বাড়িতে শনিবার বিকালে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।

Advertisement

সক্রিয় রাজনীতি থেকে সাম্প্রতিক কালে দূরে থাকলেও আইন জগতে সক্রিয় ছিলেন কাশীকান্তবাবু। লকডাউনের আগে পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টে তাঁর যাতায়াত ছিল। বিধানসভা, রাজনীতির আঙিনা, আইনি চৌহদ্দি বা আলোচনা-সভা— বাগ্মী কাশীকান্তবাবুর আলাদা আকর্ষণ ছিল। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার রাজনীতি এবং আইন জগতের এমন প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্বের বিদায়ে শোকজ্ঞাপন করেছেন তৃণমূলের সুব্রত মুখোপাধ্যায়, কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান, সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীরা।

পারিবারিক সূত্রেই রাজনীতির সঙ্গে যোগ ছিল কাশীকান্তবাবুর। তাঁর বাবা লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র ছিলেন স্বাধীনতার প্রাক্-পর্বে গণপরিষদের সদস্য। পরবর্তী কালে কৃষ্ণনগর থেকে তিনি লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। পুত্র কাশীকান্তের রাজ্য বিধানসভায় প্রবেশ সেই কৃষ্ণনগর থেকেই। প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টির (পিএসপি) হয়ে ১৯৬২ সালে তাঁর প্রথম বার বিধানসভায় যাওয়া কৃষ্ণনগর পূর্ব কেন্দ্র থেকে। এর পরে ১৯৬৭ ও ১৯৬৯ সালে দু’বার বিধায়ক হন সংযুক্ত সোশ্যালিস্ট পার্টির (এসএসপি) টিকিটে। এসএসপি তৈরি হয়েছিল পিএ্রসপি ভেঙেই। কৃষ্ণনগর পূর্ব কেন্দ্র থেকেই ১৯৭১ সালে কাশীকান্তবাবু ছিলেন নির্দল প্রার্থী। সে বার তিনি জয়লাভ করেন কংগ্রেসের সমর্থনে। পরের বছর, ১৯৭২ সালে কাশীকান্তবাবু কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচিত হন এবং সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় খাদ্য ও পশুপালনমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। একটি কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠায় তদন্তে তাঁর আপ্ত-সহায়কের নাম জড়ানোয় কাশীকান্তবাবু মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। নৈতিক অবস্থান নিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে সরে দাঁড়ানোর ওই সিদ্ধান্তকে এখনও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ হিসেবেই মনে রেখেছেন বঙ্গ রাজনীতির পুরনো চরিত্রেরা।

Advertisement

সিদ্ধার্থবাবুর মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার পরে কংগ্রেসের সঙ্গে আর তেমন সংস্রব রাখেননি কাশীকান্তবাবু। পরে ১৯৭৭ সালে আরও এক বার তিনি বিধায়ক হয়েছিলেন, সে বার জনতা পার্টির প্রার্থী হয়ে। বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনে নাটকীয় উপাদানও ছিল। আটের দশকের গোড়ায় বিধানসভা ভোটে প্রার্থী কাশীকান্তবাবু এক বার হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যান। তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগে বিস্তর হইচই পড়ে যায়। কয়েক সপ্তাহ পরে প্রত্যাবর্তন ঘটে কাশীকান্তবাবুর। ‘অপহরণে’র সঙ্গে ‘নকশাল যোগে’র অভিযোগ ছিল কাশীকান্তবাবুর তরফে।

আরও পড়ুন: প্রাণের ভয়ে জঙ্গিদের আশ্রয়, বলছেন ইনশার মা

আরও পড়ুন: প্রস্তুতি সারা, পুজোর আগেই কি চলবে মেট্রো-লোকাল? রেলকে চিঠি রাজ্যের

হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি উত্তম মজুমদার জানিয়েছেন, ৬৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাশীকান্তবাবু ওকালতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে ক্ষতি হল আইন জগতেরও। রাজ্যের তরফে তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান দেওয়া হয়েছিল ২০১৩ সালে।

কাশীকান্তবাবুর পুত্র, বিশিষ্ট চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র প্রয়াত হয়েছেন কয়েক বছর আগে। তাঁর স্ত্রী, কন্যা, পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিরা আছেন। রাজ্যের দুই মন্ত্রী সুজিত বসু ও ব্রাত্য বসু, বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী প্রমুখ এ দিন সন্ধ্যায় কাশীকান্তবাবুর বাড়ি গিয়ে শ্রদ্ধা জানান। মুখ্যমন্ত্রীর তরফে পুষ্পার্ঘ পাঠানো হয়। রাতেই সম্পন্ন হয়েছে শেষকৃত্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement