স্বপনকান্তি ঘোষ
সাত বছর পর আবার দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশ্যে সরব হলেন তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাজ্যের শাসকদলকে যখন লাগাতার বিঁধে চলেছে বিরোধীরা, সেই আবহে পুরনো দল তৃণমূলে সদ্য ফিরে আসা স্বপন বললেন, ‘‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি সব সময় কথা বলব। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হলে আবার সন্ন্যাস নিতে হতে পারে আমায়।’’ গরু পাচার-কাণ্ডে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতার হওয়া নিয়েও তিনি বলেন, ‘‘আমার কথা শুনলে অনুব্রতের এই অবস্থা হত না।’’
দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বছর সাতেক আগে বিধানসভা চত্বরে ধর্নায় বসে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন সিউড়ির প্রাক্তন বিধায়ক স্বপন। তাঁর ওই কার্যকলাপে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় শাসকদলকে। কালবিলম্ব না করে সেই সময় স্বপনকে ‘সাসপেন্ড’ করেছিল তৃণমূল। দলের তৎকালীন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সেই সময় স্বপনকে সাসপেন্ড করেন। ঘটনাচক্রে, সেই পার্থ এখন জেলে। অন্য দিকে, সাত বছর পর আবার দলে ফিরে কার্যত একই সুর স্বপনের গলায়।
সোমবার স্বপন মুখ খোলেন সংবাদমাধ্যমে। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই আবার তৃণমূলে ফিরে এসেছেন। কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না-করা হলে ফের দল ছাড়তে যে তিনি পিছপা হবেন না তা স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন স্বপন। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি বরাবরই সরব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই আমি ফেরত এসেছি। কিন্তু যদি দেখি দুর্নীতিকে আবার প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের দলে জায়গা দেওয়া হচ্ছে, তা হলে আবার সন্ন্যাস নিতে হতে পারে।’’
স্বপনের দাবি, দুর্নীতির কথা বহু দিন আগেই তিনি দলকে জানিয়েছিলেন। দলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রতের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর কথা কেউ শোনেননি বলেই দাবি স্বপনের। প্রাক্তন ওই বিধায়কের কথায়, ‘‘দলের লোকেরা দুর্নীতি করছে, এ কথা দলকে আগেই জানিয়েছি আমি। অনুব্রত মণ্ডলকেও বলেছিলাম। কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেননি। তখন আমার কথায় গুরুত্ব দিলে অনুব্রতের আজ এই অবস্থা হত না।’’
সদ্য কলকাতায় গিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেও জেলার রাজনীতিতে সেই ভাবে প্রচারের আলোয় দেখা যায়নি স্বপনকে। দলে ফিরে আসার পর জেলায় কোনও দলীয় কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা গিয়েছিল কি না, মনে করতে পারছেন না বীরভূমের শাসকদলের নেতারা। অনুব্রত গ্রেফতার হতেই দুর্নীতি নিয়ে আবার সরব হলেন তিনি। শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে গরু ও কয়লা পাচার-সহ একাধিক মামলায় যখন তৃণমূল নেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা, সেই সময়ে শাসকদলের ‘অস্বস্তি’ বাড়িয়ে স্বপনের দাবি, ‘‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলাতেই আমার বিরোধিতা করা হয়েছিল।’’